পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○と○○ রবীন্দ্র-রচনাবলী মরি’ বলিতে তাহাই বুঝাইতেছে। কিন্তু সর্বত্র নিছনি শব্দের এরূপ অর্থ পাওয়৷ যায় না । বসন্ত রায়ের কোনো পদে আছে : পরাণ কেমন করে মরম কহিনু তোরে, জীবন নিছনি তুয়া পাশ । এখানে নিছনি বলিতে কতকটা উপহারের ভাব বুঝায় । বসস্ত রায়ের অন্তত্ৰে আছে : তোমার পিরীতে হাম হইমু বিকিনী, মুলে বিকালাঙ আর কি দিব নিছনি । এখানে নিছনি বলিতে কা বুঝাইতেছে ঠিক করিয়া বলা শক্ত। এরূপ স্থলে নিছনি শব্দের সংস্কৃত মূলটি বাহির করিতে পারিলে অর্থ নির্ণয়ের সাহায্য হইতে পারে। গোবিন্দদাসের এক স্থলে আছে : দোহে দোহে তনু নিরছাই । এ স্থলে "নিছিয়া' এবং ‘নিরছাই’ এক ধাতুমূলক বলিয়া সহজেই বোধ হয় । অন্তত্র অাছে : বরু হাম জীবন তোহে নিরমঞ্জব তবহু না সোপব অঙ্গ । ইহার অর্থ, বরং আমার জীবন তোমার নিকট পরিত্যাগ করিব তথাপি অঙ্গ সমর্পণ করিব না । আর-এক স্থলে দেখা যায় : কুণ্ডল পিচ্ছে চরণ নিরমস্থল অব কিয়ে সাধসি মান । অর্থাৎ তোমার চরণে মাথা লুটাইয়া কানের কুণ্ডল ও চূড়ার ময়ূরপুচ্ছ দিয়া তোমার প। মুছাইয়া দিয়াছে, তথাপি তোমার মান গেল না ? এই নির্মস্থান শব্দই যে নিছনি শব্দের মূল রূপ, তাহাতে আর সন্দেহ নাই । অভিধানে নির্মঞ্চন শব্দের অর্থ দেখা যায়— ‘নীরাজনা, আরুতি, সেবা, মোছা ।” নীরাজনা অর্থ “আরাত্রিক, দীপমালা, সজলপদ্ম, ধৌতবস্ত্র, বিল্বপত্রাদি, সাষ্টাঙ্গপ্রণাম— এই পঞ্চ দ্বারা আরাধনা, আরুতি ।” উহার আর-এক অর্থ "শাস্তিকর্মবিশেষ ।” অতএব যেখানে নিছনি লইয়া মরি’ বলা হয়, সেখানে বুঝায় তোমার সমস্ত অমঙ্গল লইয়া মরি— এখানে ‘শাস্তিকর্ম’ অর্থের প্রয়োগ । 嘲 দোহে দোহে তনু নিরছাই এ স্থলে নিরছাই অর্থে মোছা ।