পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(? (to রবীন্দ্র-রচনাবলী আসামির সহিত হিন্দুস্তানির আর-কোনো সাদৃত নাই এবং তাহার সমস্ত সাদৃশুই বাংলার সহিত । অকারের বিশুদ্ধ উচ্চারণই হিন্দুস্থানির প্রধান বিশেষত্ব, হিন্দুস্থানিতে বট শব ইংরেজি but শব্দের অনুরূপ, বাংলায় তাহা ইংরেজি bought শব্দের স্থায় । পাশ্চাত্য ও দাক্ষিণাত্য গৌড়ীয় উচ্চারণের সহিত প্রাচ্য গৌড়ীয়ের এই সর্বপ্রধান প্রভেদ । আসামি ভাষা এ সম্বন্ধে বাংলার মতো। ঐকারের উচ্চারণেও তাহা দেখা যায় । বাংলা “ঐ ইংরেজি stoic শব্দের of, হিন্দি ঐ ইংরেজি style শব্দের ৮ । ঔ শবও তদ্রুপ । বাংলার অকার উচ্চারণ স্থানবিশেষে, যথা, ইকার উকারের পূর্বে হ্রস্ব ওকারে পরিণত হয়। কল, কলি ও কলু শব্দের উচ্চারণভেদ আলোচনা করিলেই তাহা বোধগম্য হইবে । আসামি ভাষার উচ্চারণে বাংলার এই বিশেষত্ব আছে । আসামিতে ইকারের পূর্বে ওকার প্রায় উকারে পরিণত হয়, যথা বোলে’ ক্রিয়া (বাংলা, বলে ) বিভক্তিপরিবর্তনে বুলিছে হয়। বাংলাতেও, খোলে খুলিছে, দোলে দুলিছে। বোল বুলি, খোল খুলি, ঝোলা ঝুলি, গোল গুলি, ইত্যাদি । যুক্ত অক্ষরের উচ্চারণেও প্রভেদ দেখি না, আসামিরাও স্মরণ-কে স্বরণ, স্বরূপ-কে সরূপ, পক্ষী-কে পকূখী বলে। অন্তস্থ ৱ সম্বন্ধে বক্তব্য এই যে, বাংলাতেও এই উচ্চারণ আছে, কিন্তু বর্গীয় ব ও অস্ত্যস্থ র-এ অক্ষরের ভেদ নাই, আসামিতে সেই ভেদচিহ্ন আছে। তাহা বলিয়া এ কথা কেহ মনে করিবেন না, মহারাষ্ট্রদের ন্যায় আসামিরা সংস্কৃতশব্দে অস্ত্যস্থ ও বগীয় ব-এর প্রভেদ রক্ষা করিয়া থাকে । আমরা যেখানে ‘পাওয়া’ লিখি আসামির সেখানে ‘পৱা’ লেখে । অামাদের ওয়া এবং তাহাদের ৱা উচ্চারণে একই, লেখায় ভিন্ন । যাহাই হউক, যে-ভাষা ভ্রাতাদের মধ্যে অবাধ ভাবপ্রবাহ সঞ্চারের জন্ত হওয়া উচিত, তাহাকেই প্রাদেশিক অভিমান ও বৈদেশিক উত্তেজনায় পরস্পরের মধ্যে ব্যবধানের প্রাচীরস্বরূপে দৃঢ় ও উচ্চ করিয়া তুলিবার যে-চেষ্টা তাহাকে স্বদেশহিতৈষিতার লক্ষণ বলা যায় না এবং তাহ সর্বতোভাবে অশুভকর । >\○o Q