পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ QWり রবীন্দ্র-রচনাবলী পড়ে। অতএব এ স্থলে বানানের উপর নির্ভর করা যায় না । ফলত সংস্কৃতভাষায় বাহবায়ুগ্রহণ অর্থে সাধারণত উপসৰ্গহীন শ্বাস শব্দই ব্যবহৃত হইয়া থাকে এবং নিশ্বাস ও প্রশ্বাস উভয় শব্দই অস্তবায়ুর নিঃসারণ অর্থে প্রযুক্ত হয় । দেখা গেল, উপসর্গের অর্থবিচার প্রবন্ধে প্র এবং নি উপসর্গের যে-অর্থ নির্ণয় করা হইয়াছে, নিশ্বাস শব্দের আলোচনায় তাহার কোনো পরিবর্তন ঘটিতেছে না। প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তি শব্দ লইয়া সমালোচকমহাশয় বিস্তর সূক্ষ্ম তর্ক করিয়াছেন, এ স্থলে তাহার বিস্তারিত অবতারণ ও আলোচনা বিরক্তিজনক ও নিষ্ফল হইবে বলিয়া পরিত্যাগ করিলাম। পাণ্ডিত্য অনেক সময় দুর্গম পথ স্থষ্টি করে এবং সত্য সরল পথ অবলম্বন করিয়া চলে। এ কথা অত্যন্ত সহজ যে, প্রবৃত্তি প্রবর্তনের দিক, অর্থাৎ মনের চেষ্টা তদ্বারা বাহিরের দিকে ধাবিত হয় ; নিবৃত্তি নিবর্তনের দিক, অর্থাৎ মনের চেষ্টা তদ্বারা ভিতরের দিকে ফিরিয়া আসে। সমালোচকমহাশয় প্রবৃত্তিনিবৃত্তির এই সহজ উপপত্তি পরিত্যাগপূর্বক বিশেষ জেদ করিয়া কষ্টকল্পনার পথে গিয়াছেন। তিনি বলেন, “প্রবৃত্তি কি, না প্রকৃষ্টাবৃত্তি অর্থাৎ ভালো করিয়া থাকা, এবং ক্রিয়ার অবস্থা ( কুর্বদবস্থা ) ( state of action ) কোনো বস্তুর স্থিতির বা সত্তার প্রকৃষ্ট অবস্থা বলিয়া প্রকৃষ্ট বৃদ্ধি শব্দে ক্রিয়ারম্ভ বুঝাইতে পারে।” ক্রিয়ার অবস্থাই যে ভালোরূপ থাকার অবস্থা এ কথা স্বীকার করা কঠিন। নিবৃত্তি শব্দের যে ব্যুৎপত্তি করিয়াছেন তাহাও সংগত হয় নাই । তিনি বলেন, “নিতরাং বর্ততে ইতি নিবৃত্তি অর্থাৎ নিতরাং সম্পূর্ণভাবে বেষ্টাদিশূন্ত হইয়া স্থিতি বা থাকা অর্থাৎ চেষ্টাবিরাম।” সমালোচকমহাশয় প্রতিবাদ করিয়া উত্তেজনায় নিজেকে অত্যন্ত অধিক পরিমাণে প্রকৃষ্টাবৃত্তি অর্থাৎ কুর্বদবস্থায় লইয়া গেছেন,— এ সম্বন্ধে আর-একটু নিতরাং বর্তন করিতেও পারিতেন ; কারণ প্রাচীন শব্যাচার্ষগণও নি উপসর্গের অন্তর্ভাব স্বীকার করিয়াছেন, যথা, মেদিনীকোষে নি অর্থে “মোক্ষ, অন্তর্ভাবং বন্ধনম্‌” ইত্যাদি কথিত হইয়াছে । কিন্তু পাছে সেই অর্থ স্বীকার করিলে কোনো অংশে প্রবন্ধকারের সহিত ঐক্য সংঘটন হয়, এইজন্ত যত্বপূর্বক তাহা পরিহার করিয়াছেন ; ইহা নিশ্চয় একটা প্রবৃত্তি অর্থাৎ প্রকৃষ্টাবৃত্তির কার্য । নি উপসর্গ অর্থে নিতরাং কেন হইল। বস্তুত নি, প্র, পরি, উৎ প্রভৃতি অনেক উপসর্গেরই আধিক্য অর্থ দেখা যায়। ইহার কারণ, আধিক্যের নানা দিক আছে। কোনোটা বা বাহিরে বহুদূর যায়, কোনোটা ভিতরে, কোনোটা পার্থে, কোনোটা উপরে। অত্যন্ত পাণ্ডিত্যকে এমনভাবে দেখা যাইতে পারে যে, তাহা