পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

«ፃ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রতিবাদ-লেখক মহাশয় হাস্যরসের অবতারণা করিয়া লিখিয়াছেন : যদি কেহ লেখেন, যুধিষ্ঠির দ্রৌপদীকে বলিলেন– প্রিয়ে, তুমি যে-কথা বলিতেছ তাহার বিসমোল্লায়ই গলদ’ তাহা হইলে প্রয়োগটি কি অতিশোভন হইবে । প্রয়োগের শোভনতাবিচার ব্যাকরণের কাজ নহে, অলংকার শাস্ত্রের কাজ — ইহা পণ্ডিতমহাশয় জানেন না, এ কথা বিশ্বাস করিতে আমাদের সাহস হয় না। উল্লিখিত প্রয়োগে ব্যাকরণের কোনো ভুলই নাই, অলংকারের দোষ আছে। ‘বিস্মোল্লায় গলদ’ কথাটা এমন জায়গাতেও বসিতে পারে যেখানে অলংকারের দোষ না হইয়া গুণ হইবে । অতএব পণ্ডিতমশায়ের রসিকতা এখানে বাজে খরচ হইল। যাহারা প্রাকৃত বাংলার ব্যাকরণ লিখিতেছেন, তাহার এই হাস্যবাণে বাসায় গিয়া মরিয়া থাকিবেন না। শ্ৰীযুক্ত পণ্ডিতমহাশয় এ কথাও মনে রাখিবেন যে, চলিত ভাষা অস্থানে বসাইলেই যে কেবল ভাষার প্রয়োগদোষ হয়, তাহা নহে ; বিশুদ্ধ সংস্কৃতশব্দ বিশুদ্ধ সংস্কৃতনিয়মে বাংলায় বসাইলেও অলংকারদোষ ঘটিতে পারে। কেহ যদি বলেন, আপনার সুন্দরী বক্তৃতা শুনিয়া অদ্যকার সভা আপ্যায়িত হইয়াছে, তবে তাহাতে স্বগীয় বোপদেবের কোনো আপত্তি থাকিবার কথা নাই, কিন্তু শ্রোতারা গাম্ভীর্যরক্ষা না করিতেও পারেন । খাটি বাংলাকথাগুলির নিয়ম অত্যন্ত পাকা ;– উট কথাটাকে কোনোমতেই স্ত্রীলিঙ্গে ‘উটা’ করা যাইবে না, অথবা দাগ শব্দের উত্তর কোনোমতেই ইত প্রত্যয় করিয়া ‘দাগিত হইবে না, ইহাতে সংস্কৃতব্যাকরণ যতই চক্ষু রক্তবর্ণ করুন। কিন্তু সংস্কৃতশদের বেলায় আমাদের স্বাধীনতা অনেকট। বেশি। আমরা ইচ্ছা করিলে এই মেয়েটি বড়ো সুন্দরী’ বলিতে পারি, আবার ‘এই মেয়েটি বড়ো সুন্দর ইহাও বলা চলে। আমাদের পণ্ডিতমশায় একজায়গায় লিথিয়াছেন, বিদ্যা যশের হেতুরূপে প্রতীয়মান হয়। প্রতীয়মান কথাটা তিনি বাংলাব্যাকরণের নিয়মে ব্যবহার করিয়াছেন, কিন্তু যদি সংস্কৃতনিয়মে ‘প্রতীয়মানা লিখিতেন তাহাও চলিত। আরএক জায়গায় লিখিয়াছেন, ‘বিভীষিকাময়ী ছায়াটাকে বঙ্গভাষার অধিকার হইতে নিষ্কাশিত করিয়া দিতে পারেন, — ছায়া শব্দের এক বিশেষণ বিভীষিকাময়ী সংস্কৃত বিধানে হইল অন্য বিশেষণ নিষ্কাশিত’ বাংলানিয়মেই হইল। ইহা হইতে দেখা যাইতেছে, সংস্কৃতশব্দ বাংলাভাষায় স্থবিধামতো কখনো নিজের নিয়মে চলে, কখনো বাংলানিয়মে চলে। কিন্তু খাটি বাংলাকথার সে-স্বাধীনতা নাই— ‘কথাটা উপযুক্ত হইয়াছে এমন প্রয়োগ চলিতেও পারে, কিন্তু ‘কথাটা ঠিক হইয়াছে’ না বলিয়া যদি ঠিক হইয়াছে’ বলি, তবে তাহ সহ করা অন্যায় হইবে । অতএব বাংলারচনায়