পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় ○ S)○ মাঝখান দিয়ে সে গেছে অমরাবতীর দিকে— তার সংকীর্ণ খেলাঘরের বেড়। ভেঙে গিয়েছিল, তাই প্রথম বিলাসবিভ্রমের বিস্মৃতিকে উত্তীর্ণ হয়ে সে তপঃপূত চিরস্মৃতিতে উজ্জল হয়ে বিরাজ করছে, সে-প্রেম দুঃখবন্ধুর পথে অন্তহীন সম্মুখের দিকে চলে গিয়েছে, সম্ভোগের মধ্যে তার সমাপ্তি নয় । আমি জানি শাজাহানের এই অংশটি দুর্বোধ। তাই এক সময় এটাকে বর্জন করেছিলুম। তারপরে ভাবলুম, কে বোঝে কে না-বোঝে সে-কথার বিচার আমি করতে যাব কেন – তোমাদের মতো অধ্যাপকদের অাক্কেলদাতের চর্বপদার্থ না রেখে গেলে ছাত্রমণ্ডলীদের ধাধা লাগবে কী উপায়ে । ‘আমার ধর্ম প্রবন্ধে (সবুজপত্র, ১৩২৪ আশ্বিন-কাতিক ) রবীন্দ্রনাথ বলাকার ২২ সংখ্যক কবিতাটি সম্বন্ধে প্রসঙ্গত লিখিয়াছেন : “সত্যং জ্ঞানং অনস্তম্। শাস্তং শিবং অদ্বৈতম। য়িহুদি পুরাণে আছে– মানুষ একদিন অমৃতলোকে বাস করত। সে-লোক স্বৰ্গলোক। সেখানে দুঃখ নেই, মৃত্যু নেই। কিন্তু যে-স্বৰ্গকে দুঃখের ভিতর দিয়ে, মন্দের সংঘাত দিয়ে ন৷ জয় করতে পেরেছি, সে-স্বর্গ তো জ্ঞানের স্বর্গ নয় – তাকে স্বর্গ বলে জানিই নে। মায়ের গর্ভের মধ্যে মাকে পাওয়া যেমন মাকে পাওয়াই নয়— তাকে বিচ্ছেদের মধ্যে পাওয়াই পাওয়া । গর্ত ছেড়ে মাটির পরে যখন পড়ে তখন ছেলে দেখে আপন মাকে । তোমার আদর যখন ঢাকে, জড়িয়ে থাকি তারি নাড়ির পাকে, তখন তোমায় নাহি জানি । আঘাত হানি’ তোমারি আচ্ছাদন হতে যেদিন দূরে ফেলাও টানি— সে-বিচ্ছেদে চেতন দেয় আনি – দেখি বদনখানি । তাই সেই অচেতন স্বৰ্গলোকে জ্ঞান এল । সেই জ্ঞান আসতেই সত্যের মধ্যে আত্মবিচ্ছেদ ঘটল । সত্য মিথ্যা, ভালে৷ মন্দ, জীবন মৃত্যুর দ্বন্দ্ব এসে স্বর্গ থেকে মানুষকে লজ্জা দুঃখ বেদনার মধ্যে নির্বাসিত করে দিলে। এই দ্বন্দ্ব অতিক্রম করে যে অখণ্ড সত্যে মানুষ আবার ফিরে আসে, তার থেকে তার আর বিচ্যুতি নেই। কিন্তু এই সমস্ত বিপরীতের বিরোধ মিটতে পারে কোথায় – অনন্তের মধ্যে । তাই উপনিষদে আছে সত্যং জ্ঞানং অনন্তম । প্রথমে সত্যের মধ্যে জড় জীব সকলেরই সঙ্গে এক হয়ে মানুষ বাস করে— জ্ঞান এসে বিরোধ ঘটিয়ে মানুষকে সেখান থেকে টেনে স্বতন্ত্র করে – অবশেষে সত্যের পরিপূর্ণ অনন্ত রূপের ক্ষেত্রে আবার তাকে সকলের সঙ্গে মিলিয়ে দেয় । ধর্মবোধের প্রথম অবস্থায় শাস্তং— মানুষ তখন আপন প্রকৃতির অধীন— তখন সে সুখকেই চায়, সম্পদকেই চায়, তখন শিশুর মতো কেবল