পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় や〉○ আসল কথা এই, পশ্চিমের সহিত প্রাচ্যকে মিলিতেই হইবে। পশ্চিমকে আপনার শক্তিতে আপনার করিয়া লইতেই হইবে । আমাদের যদি আত্মশক্তির অভাব ঘটে বা পশ্চিম যদি আপনাকে সত্যভাবে প্রকাশ করিতে কৃপণত করে— উভয়ই ক্ষোভের বিষয়। অধুনা ইংরেজ, ডেভিড হেয়ার প্রমুখ তাহার পূর্বতন মনীষীগণের ন্যায়, তাহার ইংরেজি সভ্যতার পূর্ণ অভিব্যক্তির পরিচয় আমাদিগকে দিতেছে না ; এবং সেইজন্যই পূর্বকালের ছাত্রসম্প্রদায়ের ন্যায় আধুনিক ছাত্রগণের সেক্সপীয়র বা বায়রনের কাব্যপাঠে সে আস্তরিক অনুরাগ আর নাই – সাহিত্যের মধ্য দিয়া ইংরেজের সহিত যে-মিলন তখন ফুটিয়া উঠিতেছিল, আজ তাহ প্রতিহত হইয়া পড়িয়াছে। তাহার যাহা শ্রেষ্ঠ, যাহা সত্য, তাহ হইতে ইংরেজ আজ আমাদিগকে স্বেচ্ছায় দূরে রাখিতেছে ; এমত অবস্থায় যদি স্বভাবতই মিলন না আসে তবে প্রবল সিডিশনের আইন করিয়া দুর্বল আমাদিগকে বাধিয়া রাখা, অসন্তোষ বৃদ্ধি করা মাত্র— দূর করা নহে। স্বশাসন এবং ভালো আইন মানুষের চরম লাভ নহে ; মামুষ মানুষকে চায়, মানুষ হৃদয়কে চায় ; তাহা যদি সে না পায় সে কিছুতেই তৃপ্ত হইতে পারে না। কিন্তু এ কথা আমাদের মনে রাখিতে হইবে যে, দীনতার নিকটেই হীনতা ধরা পড়ে – শক্তির নিকটেই যথার্থ মর্যাদা প্রকাশ পায় ; অতএব সকল দিকেই আমাদিগকে শক্তিশালী হইতে হইবে । আমাদিগের সকল দাবিই আমাদিগকে জয় করিয়া লইতে হইবে— হীনতার দ্বারা নহে, কিন্তু মহত্ত্বের দ্বারা, মনুষ্যত্বের দ্বারা । “নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্যঃ”— দুর্বল পরমাত্মাকে জানিতে পারে না ; দেবতাকে যে চাহে তাহাকে দেবগুণোচিত প্রকৃতিসম্পন্ন হইতে হইবে । তীব্র উক্তির দ্বারা নহে, দুঃসাহসিক কার্যের দ্বারা নহে, কিন্তু ত্যাগের দ্বারা আজ অণমাদিগকে শ্রেয়কে বরণ করিয়া লইতে হইবে । যখন আমরা নিজের চেষ্টা দ্বারা, নিজের ত্যাগের দ্বারা, দেশকে অাপন করিয়া লইতে এবং দেশের উপর অামাদের সত্য অধিকার স্থাপন করিতে পারিব— তখন আর আমরা দীন নই, আমরা তখন ইংরেজের সহযোগী। আমাদের দীনতার অভাবে তখন ইংরেজেরও অার হীনতা প্রকাশ পাইবে না। ভারত আজ আপনার মূঢ়তায় শাস্ত্রে ধর্মসমাজে কেবলই আপনাকে বঞ্চনা ও অপমান করিতেছে । সত্যের দ্বারা ত্যাগের দ্বারা আজ তাহাকে নিজের আত্মাকে উপলব্ধি করিতে হইবে । তাহা হইলেই আমরা যাহা চাহিতেছি তাহ পাইব এবং পশ্চিমের সহিত প্রাচ্যের মিলন সম্পূর্ণ হইবে । সেইদিনই ভারত-ইতিহাসের এই বিরোধসংকুল বর্তমান পর্বের অবসান হইবে । পরিশিষ্টের ‘হিন্দুবিবাহ’ প্রবন্ধটি যখন সমাজ গ্রন্থের প্রচলিত সংস্করণে ( পরিবর্তিত পঞ্চম সংস্করণ ) সংকলিত হয় তখন উহার অনেক অংশ বজিত হইয়াছিল। বর্তমান খণ্ডে প্রবন্ধটির সাময়িক পত্রে প্রকাশিত পাঠ সম্পূর্ণ মুদ্রিত হইল । 'আহার সম্বন্ধে চন্দ্রনাথবাবুর মত প্রবন্ধটির অমৃবৃত্তিস্বরূপ নিম্নের আলোচনাটি সাধনার ( ১২৯৮ চৈত্র ) সাময়িক-সাহিত্য-সমালোচনা হইতে মুদ্রিত হইল ।

  • २||8 e