পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬২৮ রবীন্দ্র-রচনাবলী । পারিবেন না। কিন্তু ছাত্রগণের এ কথা স্মরণ রাখিতে হইবে যে, এ উদ্যোগে প্রথমেই আকাজক্ষার অনুরূপ ফললাভের আশা করা যাইতে পারে না। ’ শ্ৰীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাত্ৰগণের প্রশ্নের উত্তরে বলেন যে র্তাহার বিশ্বাস যে, ছাত্রগণ সংকল্পে দৃঢ় থাকিলে নেতারা অবশুই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করিবেন। এখনও এ বিষয়ে কথাবার্তা চলিতেছে। অনেক ধনীসস্তান এ জন্য অর্থসাহায্য করিতেও প্রতিশ্রত হইয়াছেন। এ বিষয়ে অন্যের কথা তিনি দৃঢ়ভাবে বলিতে পারেন না। নেতৃগণের মধ্যে এখনও কাহারও কাহারও সন্দেহ আছে যে, নূতন বিশ্ববিদ্যালয়প্রতিষ্ঠিত হইলে ছাত্রগণ তাহাতে প্রবেশ করিবেন কি না। ছাত্রেরা সভা করিয়া নেতাদিগের নিকট ডেপুটেশন পাঠাইয়া বা সতীশবাবুর ডিন সোসাইটির শ্ৰীসতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়] প্রতিজ্ঞাপত্রে স্বাক্ষর করিয়া এ সন্দেহ ভঞ্জন করিতে পারেন । প্রথম অবস্থাতেই আমাদের দেশের লোকের নিকট বেশি আশা করা দুরাশা। এতদিন আমরা কেবল বিদেশীর রুদ্ধ দ্বারেই আঘাত করিয়াছি, এখন কিছু দিন স্বদেশীর দ্বারে আঘাত করিতে হইবে। প্রত্যাখ্যাত হইলেও তাঁহাতে আমাদের কোনো অপমান নাই, কেননা তাহারা আমাদেরই নিজের লোক। অভিভাবকেরা ছাত্রগণকে কেন সম্মতি দিবেন না, তাহা বুঝিতে পারা যায় না। আজ যে উত্তেজনার তরঙ্গ উঠিয়াছে, তাহা কি অভিভাবকদিগের হৃদয়ও স্পর্শ করে নাই । আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি শিক্ষার বন্দোবস্ত প্রথমেই না হয়, তবে অবশ্যই তাহা ইংরেজের বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়া গ্রহণ করিতে হইবে। প্রয়োজন হইলে বিদেশেও যাইতে হইবে । বিশেষ বিশেষ শিক্ষাকে কোনো গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ করিয়া রাখিলে চলিবে না। ছাত্রেরা সাময়িক আন্দোলনে যোগ দিবে কি না এ সম্বন্ধে তিনি র্তাহার পূর্বপ্রকাশিত মতের পুনরুক্তি করিয়া বলেন যে, ছাত্রজীবনে যদি কাহারও স্বদেশের সুখদুঃখ আশা-আকাঙ্ক্ষার সহিত পরিচয় না হয়, তবে পচিশ বৎসর বয়সের পরে যে তাহা হইবে, ইহা কখনোই স্বাভাবিক নহে, দেশের পক্ষে তাহা কল্যাণকরও হইতে পারে না। আজ যে-সকল ছাত্র গবর্মেন্টের কৃত অপমানে বিশ্ববিদ্যালয় পরিত্যাগ করিয়া প্রস্তাবিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করিতে উদ্যত হইয়াছেন, তাহদের সম্মুখে যে কুসুমাস্তৃত পথ ১ “অতঃপর শ্ৰীযুক্ত রবীন্দ্রবাবুর আহবানে যুবকদের মধ্যে শ্ৰীনরেশচন্দ্র সেন, শ্ৰীঅতুলচন্দ্র গুপ্ত, শ্রমৃসিংহ চন্দ্র মুখোপাধ্যায়, শ্ৰীমহিমচন্দ্র রায়, শ্ৰীচুনীলাল বনোপাধ্যায় ও শ্রীহরেন্দ্রনাথ দাসগুপ্ত এ বিষয়ের কিছু কিছু আলোচনা করেন। তাহদের আলোচনায় প্রকাশ পায় যে, এ বিষয়ে নেতৃবর্গকে প্রথমে অগ্রসর হইত্বে হইবে, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবিকোপার্জনের কোনো ব্যবস্থা করিতে হইবে, এবং অভিভাবকগণের মত প্রথমে গঠিত করিতে হইবে । ‘অভিভাবকগণের সম্মতি যদি না পাওয়া যায় তবে কী করা কর্তব্য।’ ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি ও ভূবিদ্যা শিক্ষার ব্যবস্থা যদি নববিশ্ববিদ্যালয় প্রথমেই না করিয়া উঠিতে পারেন, তবে ছাত্রেরা কী করিবেন। ‘ছাত্রের তো প্রস্তুত আছেন নেতারা কতদূর অগ্রসর হইলেন।’ ইত্যাদি প্রশ্নও উত্থাপিত হয় ।”