পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় Wが○○ করিয়া ইহা চলিতে পারে না। বাংলাভাষায় অনেক বিষয়ের শব্দ নাই ; সে-সকল নাই তাহার কারণ এই, ভাষায় যে-সকল কথা বলিবার আবশ্বক কোনোদিন হয় নাই সুতরাং সে-সকল বিষয় বলিতে গেলে অপর ভাষার নিকট ঋণী হইতেই হইবে । আবার বাংলাভাষায় কতকগুলি সংস্কৃতের অপভ্রষ্ট শব্দের এমন ভিন্নার্থ দাড়াইয়া গিয়াছে যে, সেগুলির সেই অর্থ বাদ দিলে বাংলাভাষায় শকাভাব ঘটিবে। সংস্কৃত ‘ঘুণা বাংলায় ঘেন্না’ হইয়াছে কিন্তু তাহাতে ঘূণা’র অর্থ বজায় নাই । ‘পিরীতি’ শবে প্রতি’র অর্থ নাই। কাজেই এ-সকল শব্দের মূলানুসন্ধান না করিলে বিশেষ ফল কী হইবে । এইরূপ অর্থাস্তর দেখিয়া মনে হয় অপ্রকাশিত গ্রন্থরাশি প্রকাশিত হইলে, আমাদের বাংলাশব্দভাণ্ডার অপূর্ণ থাকিবে না। খাটি বাংলাশব্দ লইয়াই সকল ভাব প্রকাশ করা যাইতে পারে। বাংলাশব্দের বানান লইয়া যে দাড়ি টানিবার কথা উঠিয়াছে সে সম্বন্ধে আমি এই পর্যন্ত বলি, আমি কিছুই পাকাপাকি করিয়া দিই নাই। এ সম্বন্ধে আমা অপেক্ষা দীনেশবাৰু ভালো বলিতে পারেন, কত প্রাচীন কাল হইতে কোন শব্দের কী বানান লেখা চলিয়া আসিতেছে। আমার মনে হয় যখন শ্রবণ হইতে শোনা লিখিবার সময়ে ন লেখা হয়, মূর্ধন্ত ‘ণ লিখিলে ভুল হয় তখন 'স্বর্ণ হইতে ‘সোনা যদি “ন’ দিয়া লিখি তবে ভুল কেন হইবে। এই-সকল বিষয় বিবেচনা করিয়া বাংলাব্যাকরণের বিষয় মীমাংসা করা আবশ্ব্যক । আমি যাহা বলিয়াছি তাহ। যে অপরিবর্তনীয়, তাহাই যে সৰ্বথা গ্রাহ, এ কথা যেন কেহ মনে না করেন। আমি উপকরণ সংগ্ৰহ করিয়া দিতেছি, আপনারা দেশের পণ্ডিতবর্গ তাহার ব্যবহার করুন, বাংলাব্যাকরণ কিরূপ হইবে তাহ স্থির করুন। সভাপতি সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর র্তাহার বক্তব্যে বলেন : ••• শ্ৰীমান রবীন্দ্রনাথ যে-শব্দরাশি সংগ্ৰহ করিয়াছেন ১ তাহদের ব্যবহার ও গঠন সম্বন্ধে নিয়মাদি বাংলাব্যাকরণে থকা আবণ্ঠক । যাহারা এগুলি ৪lang বলিয়া অশ্রদ্ধা করেন র্তাহারা বাংলাভাষার একাংশ বাদ দিতে চাহেন ••• শরচ্চন্দ্র শাস্ত্রী মহাশয় রবীন্দ্রনাথের এই প্রবন্ধের প্রতিবাদে পরিষদের অষ্টম মাসিক অধিবেশনে (২৮ পৌষ ১৩০৮ ) ব্যাকরণ ও বাংলাভাষা’ নামক এক প্রবন্ধ পাঠ • করেন। আলোচনার শেষে সভাপতি সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন : শ্ৰীমান রবীন্দ্রনাথ কতকগুলি বাংলাপ্রত্যয়ের উদাহরণ সংগ্ৰহ করিয়া দিয়াছেন, তাহাতে ভুল নাই, এ কথা তিনিও বলেন না। তাহাতে দুট-একটা ভুল যে না আছে তাহাও নহে। সংস্কৃতঅভিধান ও ১ দ্রষ্টব্য ধ্বস্তাত্মক শব্দ, বাংলা কৃৎ ও তদ্ধিত, বাংলাক্রিয়াপদের তালিকা : রচনাবলী, ১২শ থওঁ । ২ ব্যাকরণ ও বাংলাভাষী— ভারতী, ১৩০৮ ফাল্গুন।