পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাসের দেশ S8 রুইতনের সাহেবের প্রবেশ রুইতন । এ কী, হরতনী তুমি এখানে ? খুঁজতে খুঁজতে বেলা হয়ে গেল যে । হরতনী । কেন, কী হয়েছে, কী চাই । রুইতন । তোমাকে ডাক পড়েছে রাজসভার গরীবুমণ্ডলে । হরতনী | বলে গে, আমি হারিয়ে গেছি। রুইতন । হারিয়ে গেছ ? হরতনী । হা, হারিয়ে গেছি, যাকে খুঁজছ তাকে আর খুঁজে পাবে না, কোনোদিনই। রুইতন । এ কী কাণ্ড । এ কী দুঃসাহস । এই বনে এসেছ তুমি ? জান না- নিয়ম নেই ? হরতনী । নিয়ম তো নেই, কিন্তু কার নিয়মে বর্ষাবিহীন তাসের দেশে আজ এমন ঘনঘটা । হঠাৎ সকালে উঠেই দেখি, নীল মেঘ আকাশ জুড়ে । এতদিন তোমাদের দেশের ময়ুর গুনে গুনে পা ফেলত, নাচত সাবধানে, আজ কেন এমন অনিয়মের নাচ নাচল, সমস্ত পেখম ছড়িয়ে দিয়ে । রুইতন । কিন্তু, ঘর হতে যার আঙিনা বিদেশ; সেও আজ ফুল তুলতে বেরিয়েছে- এতবড়ো অদ্ভুত কাজ তোমার মাথায় এল কী করে । । হরতনী । হঠাৎ মনে হল, আমি মালিনী, আর-জন্মে। ফুল তুলতেম। আজ পুবে হাওয়ায় সেই জন্মের ফুলবাগানের গন্ধ এল । সেই জন্মের মাধবীবন থেকে ভ্রমর এসেছে মনের মধ্যে । °ቨማ ঘরেতে ভ্রমর এল গুনগুনিয়ে । আমারে কার কথা সে যায় শুনিয়ে । আলোতে কোন গগনে মাধবী জাগল বনে, এল সেই ফুল-জাগানোর খবর নিয়ে । সারাদিন সেই কথা সে যায় শুনিয়ে । কেমনে রহি ঘরে, মন যে কেমন করে, কেমনে কাটে যে দিন দিন গুনিয়ে । কী মায়া দেয় বুলায়ে, দিল সব কাজ ভুলায়ে, বেলা যায়। গানের সুরে জাল বুনিয়ে । রুইতন । আচ্ছা, গরাবুমণ্ডলের জন্যে বিবিসুিন্দরীদের খুঁজে বেড়াচ্ছি, তারাও কি তবেহরতনী । হা, তারাও এইখানেই, নদীর ধারে ধারে, গাছের তলায় তলায় । রুইতন । কী করছে । হরতনী | সাজ বদল করছে, আমারই মতো । কেমন দেখাচ্ছে। পছন্দ হয় ? রুইতন । মনে হচ্ছে, পর্দা খুলে গেছে, চাঁদের থেকে মেঘ গেছে। সরে, একেবারে নতুন মানুষ । হরতনী । তোমাদের ছক্কা পাঞ্জা আমাদের শাসাবার জন্যে এসেছিলেন, তাদের কী দশা হয়েছে (MN (5 ING রুইতন । কেন । কী হল । হরতনী । খ্যাপার মতো ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলছে, এমন-কি, গুন-গুন করে গানও করছে । রুইতন । গান ! ছক্কা-পাঞ্জার গান ! হরতনী । সুরে না হােক, বেসুরে । আমি তখন চুল বাধছিলুম। থাকতে পারলুম না, চলে আসতে झ्द्धन । YA রুইতন। আশ্চর্য করলে । চুল বাধা ! এ বিদ্যে কে শেখালে ।