পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাসের দেশ S(?○ এত বড়ো বদনাম । বলি, এ কি মেলেচ্ছ দেশ পেয়েছ, যেখানে একটু হাওয়া দিলেই গাছের শুকনো পাতা খসে উড়ে যায় । ইস্কাবনী । স্বচক্ষেই দেখো-না, দিদি, কী বদল ঘটিয়েছেন আমাদের পবনদেব ! দহলানী । দেখো, ছোটাে মুখে বড়ো কথা ভালো নয় । আমাদের সনাতন পবনদেব ! তবে কিনা পুঁথিতে লিখছে তার এক মহাবীর পুত্র আছেন, তিনি নাকি লম্বা লম্বা লাফ দিয়ে বেড়ান। হয়তো বা তিনিই ভর করেছেন তোমাদের ‘পরে । টেক্কানী। কেবল আমাদের খোটা দিচ্ছ কেন। এখনাে চােখে বুঝি পড়ে নি ? তিনি যে লাফ লাগিয়েছেন তাসের দেশময় । তাসিনীদের বুকে আগুন লাগিয়ে বেড়াচ্ছেন । ইস্কাবনী । সাগরপারের মানুষরা বলছে, তিনিই নাকি ওদের পূর্বপুরুষ । দহলানী । হতে পারে- ওরা লাফ-মােরা-বংশেরই সন্তান । টেক্কানী । আচ্ছা, সত্যি কথা বলো দিদি- ভিতরে ভিতরে তোমারও মন চঞ্চল হয়েছে ? না, চুপ ক’রে থাকলে চলবে না । দহলানী | কাউকে ব’লে দিবি নে তো ? টেক্কানী । তোমার গা ছুয়ে বলছি, কাউকে বলব না । u দহলানী । কাল ভোর রাত্তিরের ঘুমে স্বপ্ন দেখলুম, হঠাৎ মানুষ হয়ে গেছি, নড়েচড়ে বেড়াচ্ছি। ঠিক ওদেরই মতো । জেগে উঠে লজায় মারি আর-কি । কিন্তু 0कान् ि| किछु दी ! দহলানী । সে কথা থাক গে । ইস্কাবনী । বুঝেছি, বুঝেছি, দিনের বেলাকার বাধা পাখি খোলা পেয়েছিল স্বপ্নে । দহলানী । চুপ চুপ চুপ, নহলাপণ্ডিত শুনলে স্বপ্নেরও প্ৰায়শ্চিত্ত লাগিয়ে দেবে। ওটা পাপ যে । কিন্তু, স্বপ্নে কী ফুর্তি । টেক্কানী | যা বলিস, ভাই, তাসের দেশে সাগরপারের হাওয়া দিয়েছে খুব জোরে । কিছু যেন ধরে রাখতে পারছি নে, সব দিচ্ছে উড়িয়ে । দহলানী । তা হােক, এখনাে কিন্তু কিছু উড়ল, কিছু রইল বাকি । মাথার ঘোমটা যদি-বা খসল, পায়ের বাক-মল তো সোজা করতে পারল না । ইস্কাবনী | সত্যি বলেছিস, মনটা সমুদ্রের এপারে ওপারে দোলাদুলি করছে। ঐ দেখ-না, চিড়েতনীর মানুষ হবার অসহ্য শখ, পারে না, তাই মানুষের মুখোশ পরেছে- সেটা তাসমহলেরই কারখানাঘরে তৈরি । কী অদ্ভুত দেখতে হয়েছে। দহলানী ; আমাদের কাকে কিরকম দেখতে হয়েছে নিজেরা বুঝতেই পারি নে। গাছের আড়াল থেকে কাল শুনলুম, সদাগরের পুত্ত্বর বলছিল, এরা যে মানুষের সঙ সাজিছে । টেক্কানী । ওমা, কী লজ্জা । রাজপুত্তর কী বললেন । W দহলানী । তিনি রেগে উঠে বললেন, সে তো ভালোই- সাজের ভিতর দিয়ে রুচি দেখা দিল । তিনি বললেন, এ দেখে হেসে না, হাসতে চাও তো যাও তাদের কাছে মানুষের মধ্যে যারা তাসের সঙ সেজে বেড়ায় । ইস্কাবনী । ওমা, তাও কি ঘটে নাকি । মানুষ হয়ে তাসের নকল ! আচ্ছা, কী করে তারা ; দহলানী । রাজপুত্তর বলছিলেন, তারা রঙের কাঠি বুলোয় ঠোঁটে, কালো বাতি দিয়ে আঁকে ভুরু, আরো কত কী, আমাদের রঙ-করা তাসেন্দেরই মতো । সব চেয়ে মজার কথা, ওরা খুরওয়ালা চামড়া লাগায় পায়ের তলায় । টেক্কানী । কেন ।" দহলানী । পদোন্নতি ঘটে, মাটিতে পা পড়ে না । এ সমস্তই তাসের ঢঙে । ঐকে দেওয়া, সাজিয়ে দেওয়া কায়দা ।