পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SqVe Nq রবীন্দ্র-রচনাবলী ক্ষিতীশ । ছেলেমানুষ রুচিকে রস জোগাবার ব্যাবসা আমার নয়। আমি এসেছি। জীৰ্ণকে চূর্ণ করে সাফ করতে । বঁাশরি। বাস রে । আচ্ছা বেশ, কলামটাকে যদি ঝাঁটাই বানাতে চাও তা হলে আঁস্তাকুড়টা সত্যি হওয়া চাই, ঝাটাগাছটাও, আর সেইসঙ্গে ঝাড়-ব্যবসায়ীর হাতটাও । এই আমরাই তোমাদের নলিনাক্ষের দল, আমাদের অপরাধ আছে ঢের, তোমাদেরও আছে বিস্তর । কসুর মাপ করতে বলি নে, ভালো করে জানতে বলি, সত্যি করে জানাতে বলি, এতে ভালোই লাগুক মন্দই লাগুক কিছুই যায় ज6न कीं । ক্ষিতীশ । অন্তত তোমাকে তো জেনেছি, বাঁশি । কেমন লাগছে তারও আভাস আড়াচোখে কিছু কিছু পাও বোধ করি । বাশরি ; দেখো সাহিত্যিক, আমাদের দলেও মানান-বেমানানের একটা নিক্তি আছে । চিটেগুড় মাখিয়ে কথাগুলোকে চটচটে করে তোলা এখানে চলতি নেই। ওটাতে ঘেন্না করে । শোনো ক্ষিতীশ, আর-একবার তোমাকে স্পষ্ট করে বলি । ক্ষিতীশ । এত অধিক স্পষ্ট তোমার কথা যে, যত বুঝি তার চেয়ে বাজে বেশি । - বঁাশরি । তা হােক, শোনো । অশ্বখামার ছেলেবেলাকার গল্প পড়েছি। ধনীর ছেলেকে দুধ খেতে দেখে যখন সে কান্না ধরল, তাকে পিটুলি গুলে খেতে দেওয়া হল, দু হাত তুলে নাচতে লাগল। দুধ খেয়েছি বলে । ক্ষিতীশ । বুঝেছি, আর বলতে হবে না। অর্থাৎ, আমার লেখায় পিটুলি-গোলা জল খাইয়ে পাঠ্যকশিশুদের নাচাচ্ছি। বঁাশরি । বানিয়ে-তোলা লেখা তোমার, বই পড়ে লেখা । জীবনে যার সত্যের পরিচয় আছে তার অমন লেখা বিস্বাদ লাগে । ক্ষিতীশ । সত্যের পরিচয় আছে তোমার ? বঁাশরি । হা আছে, দুঃখ এই লেখবার শক্তি নেই। তার চেয়ে দুঃখের কথা- লেখবার শক্তি আছে তোমার, কিন্তু নেই সত্যের পরিচয় । আমি চাই, তুমি স্পষ্ট জানতে শেখ। যেমন প্রত্যক্ষ করে আমি জেনেছি, সাচ্চা করে লিখতে শেখ । যাতে মনে হবে, আমােবই মন প্ৰাণ যেন তোমার কলমের মুখে ফুটে পড়ছে। ক্ষিতীশ । জানার কথা তো বললে, জানিবার পদ্ধতিটা কী । বাশরি | পদ্ধতিটা শুরু হোক আজকের এই পাটিতে । এখানকার এই জগৎটার কাছ থেকে সেই পরিমাণে তুমি দূরে আছ, যাতে এর সমস্তটাকে নির্লিপ্ত হয়ে দেখা সম্ভব । ক্ষিতীশ । আচ্ছা, তা হলে এই পাটিটার একটা সরল ব্যাখ্যা দাও, একটা সিনপসিস । বঁাশরি । তবে শোনো | এক পক্ষে এই বাডির মেয়ে, নাম সুষমা সেন । পুরুষমাত্রেরই মত এই যে, ওরা যোগ্যপাত্র জগতে নেই নিজে ছাড়া । উদ্ধত যুবকদের মধ্যে মাঝে মাঝে এমনতরো আস্তিন-গোটানো ভঙ্গি দেখি যাতে বোঝা যায়, আইন-আদালত না থাকলে ওকে নিয়ে লোকক্ষয়কর কাণ্ড ঘটত। অপর পক্ষে শাস্তুগড়ের রাজা সোমশংকর ; মেয়েরা তার সম্বন্ধে কী কানাকানি করে বলব না, কারণ আমিও স্ত্রী জাতিরই অন্তৰ্গত । আজকের পাটি এদের দোহাকার এনগেজমেন্ট নিয়ে । ক্ষিতীশ । দুজন মানুষের ঠিকানা পাওয়া গেল । দুই সংখ্যাটা গড়ায় এসে সুশীতল গাৰ্হন্থে । তিন সংখ্যাটা নারদ, পাকিয়ে তোলে জটা, ঘটিয়ে তোলে তাপজনক নাট্য । এর মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তি কোথাও আছে নিশ্চয়, নইলে সাহিত্যিকের প্রলোভন কোথায় । বঁাশরি। আছে। তৃতীয় ব্যক্তি, সেই হয়তো প্রধান ব্যক্তি । লোকে তাকে ডাকে পুরন্দরসন্ন্যাসী । পিতৃদত্ত নামটার সন্ধান মেলে না । কেউ দেখেছে তাকে কুম্ভমেলায়, কেউ দেখেছে। গারো পাহাড়ে ভালুক-শিকারে । কেউ বলে, ও য়ুরোপে অনেককাল ছিল । সুষমাকে কলেজের পড়া পড়িয়েছে আপন ইচ্ছায় । অবশেষে ঘটিয়েছে এই সম্বন্ধ । সুষমার মা বললেন- অনুষ্ঠানটা হােক ব্ৰাহ্মসমাজের