পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

こ じbr রবীন্দ্র-রচনাবলী লীলা । (কিছু দূর থেকে) অৰ্চনা মাসি, সময় হয়ে এল ডাক পড়েছে। অৰ্চনা । (জনান্তিকে) লীলা, আধমরা করেছি, বাকিটুকু তোর হাতে । [ অৰ্চনার প্রস্থান সাহিত্যে ফাস্ট ক্লাস এম. এ. ডিগ্রি নিয়ে আবার সায়েন্স ধরেছে। রোগা শরীর, ठेgों- য় তীক্ষ, সাজগোজে নিপুণ, কটাক্ষে দেখবার অভ্যাস । লীলা । ক্ষিতীশবাবু, নমস্কার ! আপনি ‘সর্বত্র পূজ্যতের দলে । লুকোবেন কোথায়, পূজারী আপনাকে খুঁজে বের করে নিজের গরজে । এনেছি। অটােগ্রাফের খাতা । সুযোগ কি কম। কী লিখলেন দেখি । ‘অন্য-সকলের মতো নয় যে-মানুষ তার মারি অন্য-সকলের হাতে ।” চমৎকার, কিন্তু প্যাথেটিক । মারে ঈর্ষা করে । মনে রাখবেন, ছোটো যারা তাদের ভক্তিরই একটা ইডিয়ম ঈর্ষা, মারটা তাদের পূজা । ক্ষিতীশ । বাগবাদিনীর জাতই বটে, কথায় আশ্চর্য করে দিলেন । লীলা । বাচস্পতির জাত যে আপনারা । যেটা বললেম ওটা কোটেশন । পুরুষের লেখা থেকেই। আপনাদের প্রতিভা বাক্যরচনায়, আমাদের নৈপুণ্য বাক্যপ্রয়োগে । ওরিজিনালিটি আপনার বইয়ের পাতায় পাতায় । সেদিন আপনারই লেখা গল্পের বই পড়লেম । ব্রীলিয়েন্ট। ঐ-যে যাতে একজন মেয়ের কথা আছে, সে যখন দেখলে স্বামীর মন আর-এক জনের উপরে, বানিয়ে চিঠি লিখলে ; স্বামীর কাছে প্ৰমাণ করে দিলে যে সে ভালোবাসে তাদের প্রতিবেশী বামনদাসকে । আশ্চর্য সাইকলজির ধাধা । বোঝা শক্ত, স্বামীর মনে ঈর্ষা জাগাবার এই ফন্দী, না তাকে নিষ্কৃতি দেবার ঔদার্য। ক্ষিতীশ । না না, আপনি ওটালীলা । বিনয় করবেন না। এমন ওরিজিনাল আইডিয়া, এমন ঝকঝকে ভাষা, এমন চরিত্রচিত্র আপনার আর-কোনো লেখায় দেখি নি। আপনার নিজের রচনাকেও বহু দূরে ছাড়িয়ে গেছেন । ওতে আপনার মুদ্রাদোষগুলো নেই, অথচ ক্ষিতীশ । ভুল করছেন আপনি । ‘রক্তজবা”— ও-বইটা যতীন ঘটকের } লীলা । বলেন কী ! ছি, ছি, এমন ভুলও হয় ! যতীন ঘটককে যে আপনি রোজ দু-বেলা গাল দিয়ে থাকেন । আমার এ কী বুদ্ধি ! মাপ করবেন আমার অজ্ঞানকৃত অপরাধ। আপনার জন্যে আর-এক পেয়ালা চা পাঠিয়ে দিচ্ছি- রাগ করে ফিরিয়ে দেবেন না । [ লীলার প্রস্থান রাজাবাহাদুর সোমশংকরের প্রবেশ রাঘুবংশিক চেহারা ‘শালপ্ৰাংশুর্মহাভুজঃ রৌদ্রে পুড়ে ঈষৎ স্নান গৌরবর্ণ, ভারী মুখ, দাড়িগোফ-কামানো, চুড়িদার সাদা পায়জামা, চুড়িদার সাদা আচকান, সাদা মসলিনের পাঞ্জাবী কায়দার পাগড়ি, শুড়তোলা সাদা নাগরাজুতো, দেহটা যে ওজনের কণ্ঠস্বরটাও তেমনি । সোেমশংকর। ক্ষিতীশবাবু, বসতে পারি কি । ক্ষিতীশ । নিশ্চয় । সোেমশংকর। আমার নাম সোেমশংকর সিং । আপনার নাম শুনেছি মিস বঁাশরির কাছ থেকে । তিনি আপনার ভক্ত । ক্ষিতীশ । বোঝা কঠিন। অন্তত ভক্তিটা অবিমিশ্র নয়। তার থেকে ফুলের অংশ ঝরে পড়ে, কাঁটাগুলো দিনরাত থাকে বিধে । সোেমশংকর। আমার দুর্ভাগ্য আপনার বই পড়বার অবকাশ পাই নি। তবু আমাদের এই বিশেষ