পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sbro রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী শৈলর প্রবেশ । বয়স বাইশ কিন্তু দেখে মনে হয়, ষোলো থেকে আঠারোর মধ্যে । তনু দেহ শ্যামবর্ণ, চোখের ভাব স্নিগ্ধ, মুখের ভাব মমতায় ভরা । , সতীশ । কী আশ্চর্য। ভোরের স্বপ্নে আজ তোমাকেই দেখেছি, শৈল । তুমিও আমাকে দেখেছি fo୭୫ । শৈল । না, দেখি নি তো । সতীশ । আঃ, বানিয়ে বলো-না কেন । বড়ো নিষ্ঠুর তুমি । আমার দিনটা মধুর হয়ে উঠত। তা হলে । শৈল । তোমাদের ফরমাশে নিজেকে স্বপ্ন করে বানাতে হবে ! আমরা যা, শুধু তাই নিয়ে তোমাদের মন খুশি হয় না কেন । সতীশ । খুব হয়, এই-যে সাক্ষাৎ এসেছ এর চেয়ে আর কিসের দরকার । শৈল । আমি এসেছি বঁাশরির কাছে । সতীশ । ঐ দেখো, আবার একটা সত্য কথা । সদ্য বিছানা থেকে উঠেই দু-দুটাে খাটি সত্য কথা সহ্য করি এত মনের জোর নেই । ধৰ্মরাজ মাপ করতেন তোমাকে যদি বলতে আমারই জন্য এসেছ । শৈল । ব্যারিস্টার মানুষ, তুমি বডড লিটরল ! বঁাশরির কাছে আসতে চেয়েছি বলে তোমার কাছে আসবার কথা মনে ছিল না এটা ধরে নিলে কেন । সতীশ । খোটা দেবার জন্যে । বাশির সঙ্গে কথা আছে কিছু ? আমাদের লগ্ন স্থির করবার পরামর্শ ? শৈল । না, কোনো কথা নেই । ওর জন্য বড়ো মন খারাপ হয়ে থাকে । মনের মধ্যে মরণবাণ বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে অথচ কবুল করবার মেয়ে নয় । ওর ব্যথায় হাত বুলোতে গেলে ফোস করে ওঠে, সেটা যেন সাপের মাথার মণি । তাই সময় পেলে কাছে এসে বসি, যা তা বকে যাই । পরশুদিন সকালে এসেছিলুম ওর ঘরে । পায়ের শব্দ পায় নি । ওর সামনে এক বাণ্ডিল চিঠি । ডেস্কে ঝুকে পড়ছিল বসে, বেশ বুঝতে পারলুম চোখ দিয়ে জল পড়ছে। যদি জানত আমি দেখতে পেয়েছি তা হলে একটা কাণ্ড বাধত, বোধ হয় আমার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যেত । আস্তে আস্তে চলে গেলুম । কিন্তু, সেই ছবি আমি ভুলতে পারি। নে । বাশি গেল কোথায় । খানসামা চায়ের সরঞ্জাম রেখে গোল সতীশ । বঁশি এইমাত্র বেরিয়ে গেছে, ভাগ্যিস গেছে । শৈল | ভারি স্বার্থপর তুমি । সতীশ । অত্যন্ত । ও কী, উঠিছ কেন । চা তৈরি শুরু করে । শৈল । খেয়ে এসেছি । সতীশ । তা হোক-না, আমি তো খাই নি । বসে খাওয়াও আমাকে । কবিরাজী মতে একলা চা খাওয়া নিষেধ, ওতে বায়ু প্ৰকুপিত হয়ে ওঠে । শৈল । মিথ্যে আবদার কর কেন । সতীশ । সুযোগ পেলেই করি, তোমার মতো খাটি সত্য আমার ধাতে নেই। ঢালো চা, ও কী করলে, চায়ে আমি চিনি দিই নে তুমি জান । শৈল । ভুলে গিয়েছিলুম। সতীশ । আমি হলে কখনো ভুলতুম না । শৈল । আমাকে স্বপ্ন দেখে অবধি তোমার মেজাজের তো কোনো উন্নতি হয় নি। ঝগড়া করছি (<ref | সতীশ । কারণ মিষ্টি কথা পাডলে তুমিই ঝগড়া বাধাতে । সীরিয়স হয়ে উঠতে ।