পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SRbor 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী সোমশংকরের প্রবেশ সোমশংকর । বঁশি, শান্ত হও, চলো এখান থেকে । বাঁশরি । যাব না তো কী । মনে কোরো না মরব। বুক ফেটে । জীবন হবে চিরচিত।ানলের শ্মশান । কখনো এমন বিচলিত দশা হয় নি আমার । আজ কেন এল বন্যার মতো এই পাগলামি । লাজ ! লজা ! লাজ ! তোমাদের তিনজনের সামনে এই অপমান ! থামো সোমশংকর, আমাকে দয়া করতে এসো না । মুছে ফেলব। এই অপমান, কোনো চিহ্ন থাকবে না। এর কাল । এই আমি বলে গেলুম। [বাশিরি ও সুষমার প্রস্থান পুরন্দর । সোমশংকর, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি । সোেমশংকর । বলুন । পুরন্দর । যে-ব্ৰত তুমি স্বীকার করেছ তা সম্পূর্ণই তোমার আপনি হয়েছে কি । তার ক্রিয়া চলেছে তোমার প্রাণক্রিয়ার সঙ্গে ? সোমশংকর । কেন সন্দেহ বোধ করছেন । পুরন্দর । আমার প্রতি ভক্তিতেই যদি এই সংকল্প গ্ৰহণ করে থাক তবে এখনই ফেলে দাও এই বোকা । সোমশংকর । এমন কথা কেন বলছেন। আজ । আমার মধ্যে দুর্বলতার লক্ষণ কিছু দেখছেন কি ? পুরন্দর । মোহিনী শক্তি আছে আমার, এমন কথা কেউ কেউ বলে- শুনে লজ্জা পাই ; জাদুকর নই আমি । সোমশংকর । আত্মার ক্রিয়াকে যারা বিশ্বাস করে না তারা তাকে বলে জাদুর ক্রিয়া । পুরন্দর । ব্ৰতের মাহাত্ম্য তার স্বাধীনতায় । যদি ভুলিয়ে থাকি তোমাকে, সে-ভুল ভাঙতে হবে । গুরুবাক্য বিষ- সে-বাক্য যদি তোমার নিজের বাক্য না হয় । সোেমশংকর । সন্ন্যাসী, যে-ব্ৰত নিয়েছি সে আজ আমার রক্তে বইছে তেজরাপে, জ্বলছে বুকের মধ্যে হােমাগ্নির মতো । মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি, আজ আমার দ্বিধা কোথায় । পুরন্দর । এই কথাই শুনতে চেয়েছিলুম তোমার মুখ থেকে । আর-একটি কথা বাকি আছে। কেউ কেউ প্রশ্ন করে, কেন সুষমার বিবাহ দিলুম তোমার সঙ্গে । তোমারই কাছ থেকে আমি তার উত্তর 5f সোমশংকর । এতদিনের তপস্যায় এই নারীর চিত্তকে তুমি যজ্ঞের অগ্নিশিখার মতো উধের্ব জ্বালিয়ে তুলেছি, আমারই পরে ভার দিলে এই অনির্বাণ অগ্নিকে চিরদিন রক্ষা করতে । পুরন্দর । বৎস, যতদিন রক্ষা করবে তার দ্বারা তুমি আপনাকেই রক্ষা করতে পারবে ; ঐ তোমার মূর্তিমান ধর্ম, রইল তোমার সঙ্গে- ধর্মে রক্ষতি রক্ষিতম। আমার বন্ধন থেকে তুমি মুক্ত, সেইসঙ্গে শিষ্যের বন্ধন থেকে আমিও মুক্তি পেলুম । তোমাদের বিবাহের পর আমাকে যেতে হবে দূরেহয়তো কোনোদিন আমার আর দেখা পাবে না। আমার এই আশীৰ্বাদ রইল, জানাথ আত্মানম— আপনাকে পূৰ্ণ করে জানো ! [পুরন্দরের প্রস্থান । সোেমশংকর অনেকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইল সোমশংকর । ওরে ভোলা, সেই নতুন গানটা ofF ব্যৰ্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালো । একলা রাতের অন্ধকারে আমি চাই পর্থের আলো । দুন্দুভিতে হল রে কার আঘাত শুরু, বুকের মধ্যে উঠল। বেজে শুরু গুরু, পালায় ছুটে সুপ্তিরাতের স্বপ্নে-দেখা মন্দ ভালো ।