পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sbrbr রবীন্দ্র-রচনাবলী বঁাশরি । আচ্ছা, তাকে জিজ্ঞাসা করিস আমার নাম করে । সুষীমা । আচ্ছা করব। আমি যাই, কিন্তু ভুলো না। আমার কথা । বঁাশরি ; তুইও ভুলিস না। আমার কথা, আর নিয়ে যা এক বাক্স চকোলেট, কাউকে বলিস নে আমি দিয়েছি । সুষীমা । কেন । বাশরি ; মা জানতে পারলে রাগ করবেন । বঁশরি ; যদি তোর অসুখ করে । সুষীমা । বলব না, কিন্তু খেতে দেব শংকরদাদাকেও ৷ [সুষীমার প্রস্থান একখানা খাতা হাতে নিয়ে বঁাশরি সোফায় হেলান দিয়ে বসল। লীলার প্রবেশ বঁশরি ; দেখ লীলা, মুখ গভীর করে আসিস নে ভাই, তা হলে ঝগড়া হয়ে যাবে । মনে হচ্ছে সাস্তুনা দেবার কুমতলব আছে, বাদল নামল বলে । দুঃখ আমার সয়, সাস্তুনা আমার সয় না, সে পড়েছি । नैीळल ! दी व्ला (ऊँ दैभि । বঁাশরি । ক্ষিতীশের এই গল্পখানা । লীলা । (খাতাটা তুলে নিয়ে) ‘ভালোবাসার নিলাম'- নামটা চলবে বাজারে । বঁাশরি । বস্তুটাও ! এ জিনিসের কাটতি আছে। পড়তে চাস ? লীলা । না ভাই, সময় নেই, বিয়েবাডি সাজাবাব জন্যে ডাক পড়েছে । বঁশরি । আমি কি সাজাতে পারতুম না ! লীলা । আমার চেয়ে অনেক ভালো পারতিস । বাশরি ; ডাকতে সাহস হল না ! ভীরু ওরা । লীলা । তা নয়, লজা হল, কী বলে তোকে ডাকবে । বঁাশরি ; না ডেকেই লজা দিলে আমাকে । ভাবছে আমি অন্নজল ছেড়ে ঘরে দরজা দিয়ে কেঁদে মরছি। ওদের সঙ্গে যখন তোর দেখা হবে কথাপ্রসঙ্গে বলিস, “বাশি বিছানায় শুয়ে কমিক গল্প পড়ছিল, পেট ফেটে যাচ্ছিল হেসে হেসে ।” নিশ্চয় বলিস । লীলা । নিশ্চয় বলব, গল্পের বিষয়টা কী বল দেখি । বঁশরি । হিরোর নাম স্যার চন্দ্ৰশেখর । নায়িকা পঙ্কজ, ধনকুবেরের মন ভোলাতে লেগেছেন উঠে পড়ে ওঠার চেয়ে পড়ার অংশটাই বেশি । সেন্ট-অ্যান্টনির টেমটেশন ছবি দেখেছিস তো ? দিনের পর দিন নুতন বেহায়াগিরি- তোর খুব-যে শুচিবাই তা নয়, তবু ক্ষণে ক্ষণে গঙ্গার ঘাটে দৌড় মারতে চাইতেস । দ্বিতীয় নম্বরের নায়িক গলা ভেঙে মরছে। পঙ্ককুণ্ডের ধারে দাড়িয়ে । অবশেষে একদিন পৌষ মাসের অর্ধরাতে খিড়কির ঘাটে- তুই ভাবছিস হতভাগিনী আত্মহত্যা করে বঁাচল— ক্ষিতীশের কল্পনাকে অবিচার করিস নে- নায়িকা জলের মধ্যে এক পৈঠে পর্যন্ত নেবেছিল । ঠাণ্ড জলে ছ্যাক করে উঠল গা-টা । ছুটিল গরম বিছানা লক্ষ্য করে । এইখানটাতে সাইকলজির তর্ক এই, শীত করল বলেই মরা মুলতুবি কিংবা শীত করাতে আগুনের কথাটা মাথায় এল, অমনি ভাবল ওদের জ্বালিয়ে মারবে বেঁচে থেকে । লীলা । কিছুতে বুঝতে পারি নে, এত লোক থাকতে ক্ষিতীশের উপর এত ভরসা রেখেছিস কী করে ।