পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ናiፍ€sዃ O C বাপ ও মেয়ের অশ্রুহীন বিদায়ব্যাপার পাশের ঘর হইতে কৌতুহলী অন্তঃপুরিকার দল দেখিল ও শুনিল । অবাক কাণ্ড ! খোট্টার দেশে থাকিয়া খোটা হইয়া গেছে ! মায়ামমতা একেবারে নাই ! আমার শ্বশুরের বন্ধু বনমালীবাবুই আমাদের বিবাহের ঘটকালি করিয়াছিলেন । তিনি আমাদের পরিবারেরও পরিচিত । তিনি আমার শ্বশুরকে বলিয়াছিলেন, “সংসারে তোমার তো ঐ একটি মেয়ে । এখন ইহাদেরই পাশে বাড়ি লইয়া এইখানেই জীবনটা কাটাও ।” তিনি বলিলেন, “যাহা দিলাম তাহা উজাড় করিয়াই দিলাম। এখন ফিরিয়া তাকাইতে গেলে দুঃখ পাইতে হইবে । অধিকার ছাড়িয়া দিয়া অধিকার রাখিতে যাইবার মতো এমন বিড়ম্বন আর নাই ।” সব শেষে আমাকে নিভৃতে লইয়া গিয়া অপরাধীর মতো সসংকোচে বলিলেন, “আমার মেয়েটির বই পড়িবার শখ, এবং লোকজনকে খাওয়াইতে ও বড়ো ভালোবাসে । এজন্য বেহাইকে বিরক্ত করিতে ইচ্ছা করি না । আমি মাঝে মাঝে তোমাকে টাকা পাঠাইব । তোমার বাবা জানিতে পারিলে কি রাগ করিবেন ।” প্রশ্ন শুনিয়া কিছু আশ্চর্য হইলাম। সংসারে কোনো একটা দিক হইতে অর্থসমাগম হইলে বাবা রাগ করিবেন, তাহার মেজাজ এত খারাপ তো দেখি নাই । যেন ঘুষ দিতেছেন এমনিভাবে আমার হাতে একখানা একশো টাকার নোট গুজিয়া দিয়াই আমার শ্বশুর দ্রুত প্ৰস্থান করিলেন ; আমার প্রণাম লইবার জন্য সবুর করিলেন না । পিছন হইতে দেখিতে পাইলাম, এইবার পকেট হইতে রুমাল বাহির হইল । আমি স্তব্ধ হইয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিলাম। মনে বুঝিলাম, ইহারা অন্য জাতের মানুষ । বন্ধুদের অনেককেই তো বিবাহ করিতে দেখিলাম । মন্ত্র পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্ত্রীটিকে একেবারে এক গ্রাসে গলাধঃকরণ করা হয়। পাকযন্ত্রে পৌঁছিয়া কিছুক্ষণ বাদে এই পদার্থটির নানা গুণাগুণ প্ৰকাশ হইতে পারে এবং ক্ষণে ক্ষণে আভ্যন্তরিক উদবেগ উপস্থিত হইয়াও থাকে, কিন্তু রাস্তাটুকুতে কোথাও কিছুমাত্ৰ বাধে না । আমি কিন্তু বিবাহসভাতেই বুঝিয়েছিলাম, দানের মন্ত্রে স্ত্রীকে যেটুকু পাওয়া যায় তাহাতে সংসার চলে, কিন্তু পনেরো-আনা বাকি থাকিয়া যায় । আমার সন্দেহ হয়, অধিকাংশ লোকে স্ত্রীকে বিবাহমাত্র করে, পায় না এবং জানেও না যে পায় নাই ; তাহাদের স্ত্রীর কাছেও আমৃত্যুকাল এ খবর ধরা পড়ে না। কিন্তু, সে যে আমার সাধনার ধন ছিল ; সে আমার সম্পত্তি নয়, সে আমার সম্পদ । শিশির— না, এ নামটা আর ব্যবহার করা চলিল না । একে তো এটা তাহার নাম নয়, তাহতে এটা তাহার পরিচয়ও নহে। সে সূর্যের মতো ধ্রুব ; সে ক্ষণজীবিনী উষার বিদায়ের অশ্রুবিন্দুটি নয়। কী • হইবে গোপনে রাখিয়া- তাহার আসল নাম হৈমতী । দেখিলাম, এই সতেরো বছরের মেয়েটির উপরে যৌবনের সমস্ত আলো আসিয়া পডিয়াছে, কিন্তু এখনো কৈশোরের কোল হইতে সে জাগিয়া উঠে নাই। ঠিক যেন শৈলচুড়ার বরফের উপর সকালের আলো ঠিকারিয়া পড়িয়ছে, কিন্তু বরফ এখনো গলিল না । আমি জানি, কী অকলঙ্ক শুভ্ৰ সে, কী নিবিড় পবিত্ৰ । আমার মনে একটা ভাবনা ছিল যে, লেখাপড়া-জানা বড়ো মেয়ে, কী জানি কেমন করিয়া তাহার মন পাইতে হইবে । কিন্তু, অতি অল্পদিনেই দেখিলাম, মনের রাস্তার সঙ্গে বইয়ের দোকানের রাস্তার কোনো জায়গায় কোনো কাটাকাটি নাই। কবে যে তাহার সাদা মনটির উপরে একটু রঙ ধরিল, চোখে ভুকু মূল মল্লিকবে যে তাহার সমস্ত শরীর মন যেন উৎসুক হইয়া উঠিল, তাহা ঠিক করিয়া পারিব না । এ তো গেল এক দিকের কথা । আবার অন্য দিকও আছে, সেটা বিস্তারিত বলিবার সময় আসিয়াছে । রাজসংসারে আমার শ্বশুরের চাকরি । ব্যাঙ্কে যে র্তাহার কত টাকা জমিল সে সম্বন্ধে জনশ্রুতি d NR || || SRS