পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

邻国令瓦 V8 শরীর তো তেমন শক্ত নয় ।” “শোনো একবার ! এই অবস্থায় তোমাকে ফেলে বউ বাপের বাড়ি যেতে চাইবেই বা কেন ।” “ডাক্তারেরা কী বলেছে সে কথা কি সে-” “তা সে নাই জানল- চোখে তো দেখতে পাচ্ছে। সেদিন বাপের বাড়ি যাবার কথা যেমন একটু ইশারায় বলা আমনি বউ কেঁদে অস্থির ।” মাসির এই কথাটার মধ্যে সত্যের কিছু অপলাপ ছিল, সে কথা বলা আবশ্যক । মণির সঙ্গে সেদিন তার এই প্রসঙ্গে যে আলাপ হইয়াছিল সেটা নিম্নলিখিত-মতো । “বউ, তোমার বাপের বাড়ি থেকে কিছু খবর এসেছে বুঝি ? তোমার জাঠততো ভাই অনাথকে দেখলুম যেন । “হা, মা ব’লে পাঠিয়েছেন, আসছে শুক্রবারে আমার ছোটো বোনের অন্নপ্রাশন । তাই ভাবছি-” “বেশ তো বাছা, একগাছি সোনার হার পাঠিয়ে দাও, তোমার মা খুশি হবেন ।” “ভাবছি, আমি যাব । আমার ছোটো বোনকে তো দেখি নি, দেখতে ইচ্ছে করে ।” “ সে কী কথা, যতীনকে একলা ফেলে যাবে ? ডাক্তার কী বলেছে শুনেছ তো ?” “ডাক্তার তো বলছিল, এখনো তেমন বিশেষ-” “তা যাই বলুক, ওর এই দশা দেখে যাবে কী করে ।” “আমার তিন ভাইয়ের পরে এই একটি বোন, বড়ো আদরের মেয়ে— শুনেছি, ধুম করে অন্নপ্রাশন হবে- আমি না গেলে মা ভারি-” “তোমার মায়ের ভাব, বাছা, আমি বুঝতে পারি নে। কিন্তু যতীনের এই সময়ে তুমি যদি যাও, তোমার বাবা রাগ করবেন, সে আমি বলে রাখছি।” “তা জানি । তোমাকে একলাইন লিখে দিতে হবে মাসি, যে, কোনো ভাবনার কথা নেই- আমি গেলে বিশেষ কোনো-” “তুমি গেলে কোনো ক্ষতিই নেই। সে কি জানি নে । কিন্তু তোমার ব্যাপকে যদি লিখতেই হয়, আমার মনে যা আছে সব খুলেই লিখব।” “আচ্ছা, বেশ- তুমি লিখো না । আমি ওঁকে গিয়ে বললেই উনি—” “দেখো, বউ, অনেক সয়েছি- কিন্তু এই নিয়ে যদি তুমি যতীনের কাছে যাও, কিছুতেই সইব না । তোমার বাবা তোমাকে ভালো রকমই চেনেন, তাকে ভোলাতে পারবে না ।” এই বলিয়া মাসি চলিয়া আসিলেন । মণি খানিকক্ষণের জন্য রাগ করিয়া বিছানার উপর পড়িয়া রহিল । পাশের বাড়ি হইতে সই আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “এ কি সই, গোসা কেন ।” “দেখো দেখি ভাই, আমার একমাত্র বোনের অন্নপ্ৰাশন- এরা আমাকে যেতে দিতে চায় না ।” “ওমা, সে কী কথা, যাবে কোথায় । স্বামী যে রোগে শুষছে ।” “আমি তো কিছুই করি নে, করতে পারিও নে ; বাড়িতে সবই চুপচাপ, আমার প্রাণ হাপিয়ে ওঠে । এমন করে আমি থাকতে পারি নে, তা বলছি। ” “তুমি ধন্যি মেয়েমানুষ যা হােক ৷” “তা আমি, ভাই, তোমাদের মতো লোক-দেখানে ভান করতে পারি নে। পাছে কেউ কিছু মনে বলে মুখ গুজড়ে ঘরের কোণে পড়ে থাকা আমার কর্ম নয়।” “তা, কী করবে। শুনি ।” “আমি যাবই, আমাকে কেউ ধরে রাখতে পারবে না ।” “ইস, তেজ দেখে আর বঁচি নে। চললুম, আমার কাজ আছে।”