পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

邻雷g硬 8の° হলদে নামহারা ফুল, অতি ছোটাে ছোটাে ; মাঝে মাঝে কণ্টিকারি গাছ, তার নীল নীল ফুলের বুকের মাঝখানটিতে ছোট একটুখানি সোনার ফোটা ; বেড়ার কাছে কাছে কোথাও-বা কালমেঘের লতা, কোথাও-বা অনন্তমূল ; পাখিতে-খাওয়া নিমফলের বিচি পড়ে ছোটাে ছোটাে চারা বেরিয়েছে, কী সুন্দর তার পাতা— সমস্তই নিষ্ঠুর নিড়নি দিয়ে দিয়ে নিড়িয়ে ফেলা হয়। তারা বাগানের শৌখিন গাছ নয়, তাদের নালিশ শোনবার কেউ নেই। এক-একদিন ওর কাকির কোলে এসে বসে তার গলা জড়িয়ে বলে, “ঐ ঘাঁসিয়াড়াকে বলো না, আমার ঐ গাছগুলো যেন না কাটে ।” কাকি বলে, “বলাই, কী যে পাগলের মতো বকিস । ও যে সব জঙ্গল, সাফ না করলে চলবে (a " বলাই অনেকদিন থেকে বুঝতে পেরেছিল, কতকগুলো ব্যথা আছে যা সম্পূর্ণ ওর একলারই- ওর চার দিকের লোকের মধ্যে তার কোনো সাড়া নেই । এই ছেলের আসল বয়স সেই কোটি বৎসর আগেকার দিনে, যেদিন সমুদ্রের গর্ভ থেকে নতুন-জাগা পঙ্কস্তরের মধ্যে পৃথিবীর ভাবী অরণ্য আপনার জন্মের প্রথম ক্ৰন্দন উঠিয়েছে- সেদিন পশু নেই, পাখি নেই, জীবনের কলরব নেই, চার দিকে পাথর আর পাক আর জল । কালের পথে সমস্ত জীবের অগ্রগামী গাছ, সূর্যের দিকে জোড় হাত তুলে বলেছে, “আমি থাকিব, আমি বঁচিব, আমি চিরপথিক, মৃত্যুর পর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অন্তহীন প্রাণের বিকাশতীর্থে যাত্রা করব রৌদ্রে-বাদলে, দিনে-রাত্রে ।” গাছের সেই রব আজও উঠছে বনে বনে, পর্বতে প্ৰান্তরে, তাদেরই শাখায় পত্রে ধরণীর প্ৰাণ বলে বলে উঠছে, “আমি থাকিব, আমি থাকব ।” বিশ্বপ্রাণের মূক ধাত্রী এই গাছ নিরবচ্ছিন্ন কাল ধরে দুলোককে দোহন করে ; পৃথিবীর অমৃতভাণ্ডারের জন্যে প্রাণের তেজ, প্ৰাণের রস, প্ৰাণের লাবণ্য সঞ্চয় করে ; আর উৎকণ্ঠিত প্ৰাণের বাণীকে অহনিশি আকাশে উচ্ছসিত করে তোলে, “আমি থাকব ।” সেই বিশ্বপ্ৰাণের বাণী কেমন-একরকম করে আপনার রক্তের মধ্যে শুনতে পেয়েছিল। ঐ বলাই । আমরা তাই নিয়ে খুব হেসেছিলুম। একদিন সকালে একমনে খবরের কাগজ পড়ছি, বলাই আমাকে ব্যস্ত করে ধরে নিয়ে গেল বাগানে । এক জায়গায় একটা চারা দেখিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করলে, “ককা, এ গাছটা কী ।” দেখলুম একটা শিমুলগাছের চারা বাগানের খোওয়া-দেওয়া রাস্তার মাঝখানেই উঠেছে। হায় রে, বলাই ভুল করেছিল আমাকে ডেকে নিয়ে এসে । এতটুকু যখন এর অন্ধুর বেরিয়েছিল, শিশুর প্রথম প্ৰলাপটুকুর মতো, তখনই এটা বলাইয়ের চোখে পড়েছে। তার পর থেকে বলাই প্রতিদিন নিজের হাতে একটু একটু জল দিয়েছে, সকালে বিকেলে ক্ৰমাগতই ব্যগ্র হয়ে দেখেছে কতটুকু বাড়ল । শিমুলগাছ বাড়েও দ্রুত, কিন্তু বলাইয়ের আগ্রহের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে না । যখন হাত দুয়েক উচু হয়েছে তখন ওর পত্ৰসমৃদ্ধি দেখে ভাবলে এ একটা আশ্চর্য গাছ, শিশুর প্রথম বুদ্ধির আভাস দেখবামাত্র মা যেমন মনে করে আশ্চর্য শিশু । বলাই ভাবলে, আমাকেও চমৎকৃত করে দেবে । আমি বললুম, “মালীকে বলতে হবে, এটা উপড়ে ফেলে দেবে ।” বলাই চমকে উঠল। এ কী দারুণ কথা । বললে, “না, কাকা, তোমার দুটি পায়ে পড়ি, উপড়ে (F(aों कीं ।” আমি বললুম, “কী যে বলিস তার ঠিক নেই। একেবারে রাস্তার মাঝখানে উঠেছে। বড়ো হলে চার দিকে তুলো ছড়িয়ে অস্থির করে দেবে।” আমার সঙ্গে যখন পারলে না, এই মাতৃহীন শিশুটি গেল তার কাকির কাছে। কোলে বসে তার গলা জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে যুঁপিয়ে কঁদতে কঁদিতে বললে, “কাকি, তুমি কাকাকে বারণ করে দাও, গাছটা যেন না। কাটেন ।” উপায়টা ঠিক ঠাওরেছিল । ওর কাকি আমাকে ডেকে বললে, “ওগো, শুনিছ! আহা, ওর গাছটা