পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

5闻@咬 8 S (፩ মানতেন না, মানতেন। আপনি ইষ্টদেবতাকে । এ নিয়ে স্বামী একদিন ঠাট্টা করাতে বলেছিলেন, “ভায়ে ভয়ে তুমি পেয়াদাগুলোর কাছে সেলাম ঠুকে বেড়াও, আমি মানি স্বয়ং রাজাকে ৷” স্বামী বললেন, “ঠকবে । রাজা থাকলেও যা না-থাকলেও তা, লাঠি ঘাড়ে নিশ্চিত আছে পেয়াদার प्रब्ल ।।' ' শাশুড়ি-ঠাকরুন বললেন, “ঠকব সেও ভালো । তাই বলে দেউড়ির দরবারে গিয়ে নাগরা জুতোর কাছে মাথা হেঁট করতে পারব না ।” আমার শাশুড়ি আমাকে বড়ো স্নেহ করতেন । তার কাছে আমার মনের কথা ছিল অবারিত । অবকাশ বুঝে একদিন তঁাকে বললেম, “মা, তোমার নেই ছেলে, আমার নেই মা । মেয়ে দিয়ে আমাকে দাও তোমার ছেলের জায়গাটি । তোমার সম্মতি পেলে তার পরে পায়ে ধরব অধ্যাপকের ।” তিনি বললেন, “অধ্যাপকের কথা পরে হবে বাছা, আগে তোমার ঠিকুজি এনে দাও আমার, কাছে ।” দিলেম এনে । তিনি বললেন, “হবার নয় । অধ্যাপকের মত হবে না । অধ্যাপকের মেয়েটিও তার বাপেরই শিষ্যা ।” আমি জিজ্ঞাসা করলুম, “মেয়ের মা ?” বললেন, “আমার কথা বোলো না । আমি তোমাকে জানি, আমার মেয়ের মনও জানি, তার বেশি। জানিবার জন্যে নক্ষত্ৰলোকে ছোটবার শখ নেই। আমার ।” আমার মন উঠল বিদ্রোহী হয়ে । বললেম, “এমনতরো অবাস্তব বাধা মানাই অন্যায় । কিন্তু, যা অবাস্তব তার গায়ে ঘা বসে না । তার সঙ্গে লড়াই করব কী দিয়ে ।” এ দিকে মেয়ের সম্বন্ধের কথা আসতে লাগল নানা দিক থেকে । গ্ৰহতারকার অসম্মতি নেই এমন প্ৰস্তাবও ছিল তার মধ্যে । মেয়ে জিদ করে বলে বসল, সে চিরকাল কুমারী থাকবে, বিদ্যার সাধনাতেই যাবে তার দিন । বাপ মানে বুঝলেন না, তার মনে পড়ল। লীলাবতীর কথা । মা বুঝলেন, গোপনে জল পড়তে লাগল তার চোখ দিয়ে। অবশেষে একদিন মা আমার হাতে একখানি কাগজ দিয়ে বললেন, “সুনেত্রার ঠিকুজি । এই দেখিয়ে তোমার জন্মপত্রী সংশোধন করিয়ে নিয়ে এসো। আমার মেয়ের অকারণ দুঃখ সইতে পারব না ।” 鬼 পরে কী হল বলতে হবে না । ঠিকুজির অঙ্কজাল থেকে সুনেত্রাকে উদ্ধার করে আনলেম । চোখের জল মুছতে মুছতে মা বললেন, “পুণ্যকর্ম করেছ, বাছা ।” তার পরে গেছে একুশ বছর কেটে । 8 হাওয়ার বেগ বাড়তে চলল, বৃষ্টির বিরাম নেই। সুনেত্রীকে বললেম, “আলোটা লাগছে চোখে, নিবিয়ে দিই।” নিবিয়ে দিলেম । বৃষ্টিধারার মধ্যে দিয়ে রাস্তার ল্যাম্পের ঝাপসা আভা এল অন্ধকার ঘরে । সোফার উপরে সুনেত্রীকে বসালেম আমার পাশে। বললেম, “সুনি, আমাকে তোমার যথার্থ দোসর বলে মান তুমি ?” “এ আবার কী প্রশ্ন হল তোমার । উত্তর দিতে হবে নাকি ৷” “তোমার গ্ৰহতারা যদি না মানে ?” “নিশ্চয় মানে, আমি বুঝি জানি নে ?” “এতদিন তো একত্রে কাটল আমাদের, কোনো সংশয় কি কোনোদিন উঠেছে তোমার মনে ।” “অমন সব বাজে কথা জিজ্ঞাসা করা যদি রাগ করব ।”