পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎসর্গ কল্যাণীয় শ্ৰীমান অমিয়চন্দ্ৰ চক্রবতীকে শ্ৰীমান অমিয়চন্দ্র চক্রবর্তী কল্যাণীয়েযু রসসাহিত্যের রহস্য অনেক কাল থেকেই আগ্রহের সঙ্গে আলোচনা করে এসেছি, ভিন্ন ভিন্ন তারিখের এই লেখাগুলি থেকে তার পরিচয় পাবে । এই প্রসঙ্গে একটি কথা বার বার নানারকম করে বলেছি। সেটা এই বইয়ের ভূমিকায় জানিয়ে রাখি । মন নিয়ে এই জগৎটাকে কেবলই আমরা জানিছি। সেই জানা দুই জাতের । জ্ঞানে জানি বিষয়কে । এই জানায় জ্ঞাতা থাকে পিছনে, আর জ্ঞেয় থাকে তার ब्जक्राg° ना6न्म । 莺 ভাবে জানি আপনাকেই, বিষয়টা থাকে উপলক্ষ্যরূপে সেই আপনার সঙ্গে মিলিত বিষয়কে জানার কাজে আছে বিজ্ঞান । এই জানার থেকে নিজের ব্যক্তিত্বকে সরিয়ে রাখার সাধনাই বিজ্ঞানের । মানুষের আপনাকে দেখার কাজে আছে সাহিত্য । তার সত্যতা মানুষের আপনি উপলব্ধিতে, বিষয়ের যাথার্থ্যে নয়। সেটা অদ্ভুত হােক, অতথ্য হােক, কিছুই আসে-যায় না। এমন-কি, সেই অদ্ভুতের সেই অতথ্যের উপলব্ধি যদি নিবিড় হয় তবে সাহিত্যে তাকেই সত্য বলে স্বীকার করে নেবে। মানুষ শিশুকাল থেকেই নানা ভাবে আপন উপলব্ধির ক্ষুধায় ক্ষুধিত ; রূপকথার উদভব তারই থেকে । কল্পনার জগতে চায় সে হতে নানাখানা ; রামও হয়, হনুমানও হয়, ঠিক মতো হতে পারলেই খুশি । তার মন গাছের সঙ্গে গাছ হয়, নদীর সঙ্গে নদী । মন চায় মিলতে, মিলে হয় খুশি । মানুষের আপনাকে নিয়ে এই বৈচিত্র্যের লীলা সাহিত্যের কাজ । সে লীলায় সুন্দরও আছে, অসুন্দরও আছে । একদিন নিশ্চিত স্থির করে রেখেছিলেম, সৌন্দর্যরচনাই সাহিত্যের প্রধান কাজ । কিন্তু, এই মতের সঙ্গে সাহিত্যের ও আর্টের অভিজ্ঞতাকে মেলানো যায় না দেখে মনটাতে অত্যন্ত খটকা লেগেছিল । ভাড়দত্তকে সুন্দর বলা যায় না- সাহিত্যের সৌন্দর্যকে প্রচলিত সৌন্দর্যের ধারণায় । ধরা গেল না ।