পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 SRV রবীন্দ্র-রচনাবলী সম্বন্ধে তর্ক উঠিলে হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ায় এবং এক পক্ষ অথবা উভয় পক্ষ ভূমিসাৎ হইলেও কোনো ईीभांश्नों श्श नां । রস জিনিসটা রসিকের অপেক্ষা রাখে, কেবলমাত্র নিজের জোরে নিজেকে সে সপ্ৰমাণ করিতে পারে না । সংসারে বিদ্বান, বুদ্ধিমান, দেশহিতৈষী, লোকহিতৈষী প্রভৃতি নানা প্রকারের ভালো ভালো রসভারতী স্বয়ম্বরসভায় আর-সকলকেই বাদ দিয়া কেবল রসিকের সন্ধান করিয়া থাকেন । না, কিন্তু অরসিক আপনাকে অরসিক বলিয়া জানিয়াছে, সংসারে এই অভিজ্ঞতাটা দেখা যায় না । আমার কোনটা ভালো লাগিল এবং আমার কোনটা ভালো লাগিল না সেইটেই যে রসপরীক্ষার চূড়ান্ত মীমাংসা, পনেরো-আনা লোক সে সম্বন্ধে নিঃসংশয় । এইজন্যই সাহিত্যসমালোচনায় বিনয় নাই । মূলধন না থাকিলেও দালালির কাজে নামিতে কাহারও বাধে না, তেমনি সাহিত্য সমালোচনায় কোনো প্রকার পুঁজির জন্য কেহ সবুর করে না । কেননা, সমালোচকের পদটা সম্পূর্ণ নিরাপদ । সাহিত্যের যাচাই-ব্যাপারটা এতই যদি অনিশ্চিত, তবে সাহিত্য যাহারা রচনা করে তাহদের উপায় কী। আশু উপায় দেখি না। অর্থাৎ, তাহারা যদি নিশ্চিত ফল জানিতে চায়। তবে সেই জানিবার বরাত তাহাদের প্রপৌত্রের উপর দিতে হয়। নগদ-বিদায় যেটা তাহাদের ভাগ্যে জোটে সেটার উপর অত্যন্ত ভর দেওয়া চলিবে না । রসবিচারে ব্যক্তিগত এবং কালগত ভুল সংশোধন করিয়া লইবার জন্য বহু ব্যক্তি ও দীর্ঘ সময়ের ভিতর দিয়া বিচাৰ্য পদার্থটিকে বহিয়া লইয়া গেলে তবে সন্দেহ মেটে । কোনো কবির রচনার মধ্যে সাহিত্যাবস্তুটা আছে কি না তাহার উপযুক্ত সমজদার কবির সমসাময়িকদের মধ্যে নিশ্চয়ই অনেক আছে, কিন্তু তাহারাই উপযুক্ত কি না তাহার চূড়ান্ত নিম্পত্তি দাবি করিলে ঠিক অসম্ভব নয় । এমন অবস্থায় লেখকের একটা সুবিধা আছে। এই যে, তাহার লেখা যে-লোক পছন্দ করে সেই যে সমজদার তাহা ধরিয়া লইতে বাধা নাই। অপর পক্ষকে তিনি যদি উপযুক্ত বলিয়া গণ্যই না করেন তবে এমন বিচারালয় হাতের কাছে নাই যেখানে তাহারা নালিশ রুজু করিতে পারে। অবশ্য, কালের আদালতে ইহার বিচার চলিতেছে, কিন্তু সেই দেওয়ানি আদালতের মতো দীর্ঘসূত্রী আদালত ইংরেজের মুলুকেও নাই। এ স্থলে কবিরই জিত রহিল, কেননা আপাতত দখল যে তাহারই । কালের পেয়াদা যেদিন তাহার খ্যাতি-সীমানার খুঁটি উপড়াইতে আসিবে সেদিন সমালোচক সেই তামাশা দেখিবার জন্য সবুর করিতে পরিবে না। যাহারা আধুনিক বঙ্গসাহিত্যে বাস্তবতার তল্লাস করিয়া ! একেবারে হতাশ্বাস হইয়া পড়িয়াছেন তাহারা আমার কথার উত্তরে বলিবেন, “দাড়িপাল্লায় চড়াইয়া, রস-জিনিসটার বস্তু পরিমাণ করা যায় না, এ কথা সত্য, কিন্তু রস-পদাৰ্থ কোনো একটা বস্তুকে আশ্রয় করিয়া তো প্ৰকাশ পায় । সেইখানেই আমরা বাস্তবতার বিচার করিবার সুযোগ পাইয়া থাকি ৷” নিশ্চয়ই রসের একটা আধার আছে। সেটা মাপকাঠির আয়ত্তাধীন সন্দেহ নাই । কিন্তু, সেইটেরই বস্তুপিণ্ড ওজন করিয়া কি সাহিত্যের দর যাচাই হয় । রসের মধ্যে একটা নিত্যতা আছে। মান্ধাতার আমলে মানুষ যে-রসটি উপভোগ করিয়াছে আজও তাহা বাতিল হয় নাই। কিন্তু, বস্তুর দর বাজার-অনুসারে এবেলা ওবেলা বদল হইতে থাকে । আচ্ছা, মনে করা যাক, কবিতাকে বাস্তব করিবার লোভ আমি আর সামলাইতে পারিতেছি না । খুজিতে লাগিলাম, দেশে সব চেয়ে কোন ব্যাপারটা বাস্তব হইয়া উঠিয়াছে । দেখিলাম, ব্ৰাহ্মণসভাটা দেশের মধ্যে রেলোয়ে-সিগনালের স্তম্ভটার মতো চক্ষু রক্তবর্ণ করিয়া আপনার একটিমাত্র পায়ে ভর দিয়া খুব উচু হইয়া দাড়াইয়াছে। কায়ন্থেরা পৈতা লইবেই আর ব্ৰাহ্মণসভা তাহার পৈতা কাড়িবে, এই ঘটনাটা বাংলাদেশে বিশ্বব্যাপারের মধ্যে সব চেয়ে বড়ো । অতএব, বাঙালি কবি যদি ইহাকে তাহার