পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"সাহিত্যের পথে 8总知 হইয়াছে, অর্থাৎ স্বেদ-কম্প-রোমাঞ্চর ভিতর দিয়া একেবারেই দশম দশা । যাহা ভালো তাহাকে পাইবার জন্য সাধনা করিতেই হইবে- রাজার ছেলেকেও করিতে হইবে, কৃষাণের ছেলেকেও । রাজার ছেলের সুবিধা এই যে, তাহার সাধনা করিবার সময় আছে, কৃষাণের ছেলের নাই। কিন্তু, সেটা সামাজিক ব্যবস্থার তর্ক- যদি প্ৰতিকার করিতে পাের, করিয়া দাও, কাহারও আপত্তি হইবে না। তানসেন তাই বলিয়া মেঠো-সুর তৈরি করিতে বসিবেন না। তাহার সৃষ্টি আনন্দের সৃষ্টি, সে যাহা তাহাই ; আর-কোনো মতলবে সে আর-কিছু হইতে পারেই না । যাহারা রসপিপাসু। তাহারা যত্ন করিয়া শিক্ষা করিয়া সেই ধ্রুপদগুলির নিগৃঢ় মধুকোষের মধ্যে প্রবেশ করিবে । অবশ্য, লোক-সাধারণ যতক্ষণ সেই মধুকোষের পথ না জানিবে ততক্ষণ তানক্সেনের গান তাহদের কাছে সম্পূর্ণ অবাস্তব, এ কথা মানিতেই হইবে । তাই বলিতেছিলাম, কোথায় কোন বস্তুর খোজ করিতে হইবে, কেমন করিয়া খোজ করিতে হইবে, কে তাহার খোজ পাইবার অধিকারী, সেটা তো নিজের খেয়ালমত এক কথায় প্রমাণ বা অপ্ৰমাণ করা যায় না । তবে কবিদের অবলম্বনটা কী । একটা-কিছুর পরে জোর করিয়া তাহারা তো ভর দিয়াছেন । নিশ্চয়ই দিয়াছেন । সেটা অন্তরের অনুভূতি এবং আত্মপ্রসাদ। কবি যদি একটি বেদনাময় চৈতন্য লইয়া জন্মিয়া থাকেন, যদি তিনি নিজের প্রকৃতি দিয়াই বিশ্বপ্রকৃতি ও মানবপ্রকৃতির সহিত আত্মীয়তা করিয়া থাকেন, যদি শিক্ষা অভ্যাস প্রথা শাস্ত্র প্রভৃতি জড় আবরণের ভিতর দিয়া কেবলমাত্র দশের নিয়মে তিনি বিশ্বের সঙ্গে ব্যবহার না করেন, তবে তিনি নিখিলের সংস্রবে যাহা অনুভব করিবেন তাহার একান্ত বাস্তবতা সম্বন্ধে তাহার মনে কোনো সন্দেহ থাকিবে না । বিশ্ববন্তু ও বিশ্বরসকে একেবারে অব্যবহিত ভাবে তিনি নিজের জীবনে উপলব্ধি করিয়াছেন, এইখানেই তাহার জোর। পূর্বেই বলিয়াছি, বাহিরের হাটে বস্তুর দর কেবলই উঠা-নমা করিতেছে- সেখানে নানা মুনির নানা মত, নানা লোকের নানা ফরমাশ, নানা কালের নানা ফ্যাশান । বাস্তবের সেই হট্টগোলের মধ্যে পড়িলে কবির কাব্য হাটের কাব্য হইবে । তাহার অন্তরের মধ্যে যে ধ্রুব আদর্শ আছে তাহারই পরে নির্ভর করা ছাড়া অন্য উপায় নাই । সে আদর্শ হিন্দুর আদর্শ বা ইংরেজের আদর্শ নয়, তাহা লোকহিতের এবং ইস্কুল-মাস্টারির আদর্শ নহে । তাহা আনন্দময় সুতরাং অনির্বাচনীয় । কবি জানেন, যেটা তঁহার কাছে এতই সত্য সেটা কাহারও কাছে মিথ্যা নহে। যদি কাহারও কাছে তাহা মিথ্যা হয় তবে সেই মিথ্যাটাই মিথ্যা ; যে-লোক চোখ বুজিয়া আছে তাহার কাছে আলোক যেমন মিথ্যা এও তেমনি মিথ্যা । কাব্যের বাস্তবতা সম্বন্ধে কবির নিজের মধ্যে যে-প্রমাণ, তিনি জানেন, বিশ্বের মধ্যেই সেই প্ৰমাণ আছে । সেই প্ৰমাণের অনুভূতি সকলের নাই- সুতরাং বিচারকের আসনে যে-খুশি বসিয়া যেমন-খুশি রায় দিতে পারেন, কিন্তু ডিক্রিজারির বেলায় যে তাহা খাটিবেই এমন কোনো কথা নাই । কবির আত্মানুভূতির যে-উপাদানটার কথা বলিলাম। এটা সকল কবির সকল সময়েই যে বিশুদ্ধ থাকে তাহা নহে। তাহা নানা কারণে কখনো আবৃত হয়, কখনো বিকৃত হয়, নগদ মূল্যের প্রলোভনে কখনো তাহার উপর বাজারে-চলিত আদর্শের নকলে কৃত্ৰিম নকশা কাটা হয়- এইজন্য তাহার সকল অংশ নিত্য নহে এবং সকল অংশের সমান আদর হইতেই পারে না । অতএব, কবি রাগই করুন। আর খুশিই হউন, তাহার কাব্যের একটা বিচার করিতেই হইবে- এবং যে-কেহ তাহার কাব্য পড়িবে সকলেই তাহার বিচার করিবে- সে বিচারে সকলে একমত হইবে না । মোটের উপরে, যদি নিজের মনে তিনি যথার্থ আত্মপ্ৰসাদ পাইয়া থাকেন তবে তাহার প্রাপ্যটি হাতে হাতে চুকাইয়া লইয়াছেন । অবশ্য, পাওনার চেয়ে উপরি-পাওনায় মানুষের লোভ বেশি । সেইজন্যই বাহিরে আশে-পাশে আড়ালে-আবডালে এত করিয়া হােত পাতিতে হয় । ঐখানেই বিপদ । কেননা লোভে পাপ, পাপে भउ । effke S SON Y