পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হিত্যের পথে 86ሉ (ሱ বুদ্ধিতে-ব্যবহারে বিজ্ঞান কোনোখানেই প্রবেশাধিকার পায় নি সে-দেশের সাহিত্যে ধার-করা নকল নির্লজতাকে কার দোহাই দিয়ে চাপা দেবে । ভারতসাগরের ওপারে যদি প্রশ্ন করা যায় “তোমাদের সাহিত্যে এত হাঁটুগোল কেন, উত্তর পাই, “হট্টগোল সাহিত্যের কল্যাণে নয়, হাটেরই কল্যাণে । হাটে যে ঘিরেছে?” ভারতসাগরের এপারে যখন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করি তখন জবাব পাই, হাট ত্রিসীমানায় নেই বটে, কিন্তু হট্টগোল যথেষ্ট আছে । আধুনিক সাহিত্যের ঐটেই বাহাদুরি।” ፫ R \OVO8 সাহিত্যে নবও সকল দেশের সাহিত্যেরই প্ৰধান কাজ হচ্ছে শোনবার লোকের আসনটি বড়ো করে তোলা, যেখান থেকে দাবি আসে । নইলে লেখবার লোকের শক্তি খাটো হয়ে যায় । যে-সব সাহিত্য বনেদি তারা বহু কালের আর বহু মানুষের কানে কথা কয়েছে। তাদের কথা দিন-আনি-দিন-খাই তহবিলের ওজনে নয় । বনেদি সাহিত্যে সেই শোনবার কান তৈরি করে তোলে । যে-সমাজে অনেক পাঠকের সেই শোনবার কান তৈরি হয়েছে সে-সমাজে বড়ো করে লেখবার শক্তি অনেক লেখকের মধ্যে আপনিই দেখা দেয়, কেবলমাত্র খুচরো মালের ব্যাবসা সেখানে চলে না। সেখানকার বড়ো মহাজনদের কারবার আধা নিয়ে নয়, পুরো নিয়ে। তাদের আধার ব্যাপারী বলব না, সুতরাং জাহাজের খবর তাদের GRAN বাংলাদেশে প্রথম ইংরেজি শিক্ষার যোগে এমন সাহিত্যের সঙ্গে আমাদের চেনাশোনা হল যার স্থান বিপুল দেশের ও নিরবধি কালের । সে সাহিত্যের বলবার বিষয়টা যতই বিদেশী হােক-না, তার বলবার আদর্শটা সৰ্বকালীন ও সর্বজনীন । হােমরের মহাকাব্যের কাহিনীটা গ্ৰীক, কিন্তু তার মধ্যে কাব্যরচনার যে-আদর্শটা আছে যেহেতু তা সার্বভৌমিক এইজন্যেই সাহিত্যাপ্রিয় বাঙালিও সেই গ্ৰীক কাব্য পড়ে তার রস পায় । আপেল ফল আমাদের দেশের অনেক লোকের পক্ষেই অপরিচিত, ওটা সর্বাংশেই বিদেশী, কিন্তু ওর মধ্যে যে ফলত্ব আছে সেটাকে আমাদের অত্যন্ত স্বাদেশিক রসনাও- মুহুর্তের মধ্যে সাদরে স্বীকার ক’রে নিতে বাধা পায় না । শরৎ চাটুজের গল্পটা বাঙালির, কিন্তু গল্প বলাটা একান্ত বাঙালির নয় ; সেইজন্যে তার গল্প-সাহিত্যের জগন্নাথ-ক্ষেত্রে জাত-বিচারের কথা উঠতেই পারে না । গল্প-বলার সর্বজনীন আদর্শটাই ফলাও ক্ষেত্রে সকল লোককে ডাক দিয়ে আনে । সেই আদর্শটা খাটো হলেই নিমন্ত্রণটা ছোটো হয় ; সেটা পারিবারিক ভোজ হতে পারে, স্বজাতের ভোজ হতে পারে, কিন্তু সাহিত্যের যে-ভীর্থে সকল দেশের যাত্রী এসে মেলে সে-তীর্থের মহাভোজ হবে না । কিন্তু, মানুষের কানের কাছে সর্বদাই যারা ভিড় করে থাকে, যাদের ফরমাশ সব চেয়ে চড়া গলায়, তাদের পাতে জোগান দেবার ভার নিতে গেলেই ঠেকতে হবে ; তারা গাল পাড়তে থাকলেও তাদের এড়িয়ে যাবার মতো মনের জোর থাকা চাই । যাদের চিত্ত অত্যন্ত ক্ষণকালবিহারী, যাদের উপস্থিত গরজের দাবি অত্যন্ত উগ্র, তাদেরই হট্টগোল সাৰ চেয়ে বেশি শোনা যায়। সকালবেলার সূর্যালোকের চেয়ে বেশি দৃষ্টিতে পড়ে যে-আলোটা ল্যাম্প-পোস্টের উপরকার কাচফালক থেকে ঠিকরে চোখে এসে বেঁধে । আবদারের প্রাবল্যকেই প্ৰামাণ্য মনে করার বিপদ আছে । যে-লেখকের অন্তরেই বিশ্বশ্রোতার আসন তিনিই বাইরের শ্রোতার কাছ থেকে নগদ বিদায়ের লোভ সামলাতে পারেন । ভিতরের মহনীরব যদি তাকে বরণমালা দেয় তা হলে তার আয় ভাবনা থাকে না, তা হলে বাইরের নিত্যমুখরকে তিনি দূর থেকে নমস্কার করে নিরাপদে চলে যেতে পারেন। ইংরেজি শিক্ষার গোড়াতেই আমরা যে-সাহিত্যের পরিচয় পেয়েছি তার মধ্যে বিশ্ব-সাহিত্যের আদর্শ ছিল এ কথা মানতেই হবে। কিন্তু, তাই বলে এ কথা বলতে পারব না যে, এই আদর্শ যুরোপে