পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হিত্যের পথে 8心> মোহমুক্ত দেখাতেই খাটি আনন্দ । আধুনিক বিজ্ঞান যে নিরাসক্ত চিত্তে বাস্তবকে বিশ্লেষণ করে আধুনিক কাব্য সেই নিরাসক্ত চিত্তে বিশ্বকে সমগ্ৰদূষ্টিতে দেখবে, এইটেই শাশ্বতভাবে আধুনিক । কিন্তু, একে আধুনিক বলা নিতান্ত বাজে কথা। এই-যে নিরাসক্ত সহজ দৃষ্টির আনন্দ এ কোনো বিশেষ কালের নয়। যার চোখ এই অনাবৃত জগতে সঞ্চারণ করতে জানে এ তারই । চীনের কবি লি-পো যখন কবিতা লিখছিলেন সে তো হাজার বছরের বেশি হল । তিনি ছিলেন আধুনিক ; তার ছিল বিশ্বকে সদ্য-দেখা চোখ । চারটি লাইনে সাদা ভাষায় তিনি লিখছেন আর-একটা ছবি আর-একটন একটি বধুর কথা— এই সবুজ পাহাড়গুলোর মধ্যে থাকি কেন । প্রশ্ন শুনে হাসি পায়, জবাব দিই নে । আমার মন নিস্তব্ধ । যে আর-এক আকাশে আর-এক পৃথিবীতে বাস করি।-- সে জগৎ কোনো মানুষের না । পীচ গাছে ফুল ধরে, জলের স্রোত যায় বয়ে । নীল জল-- নির্মল চাদ, চাদের আলোতে সাদা সারস উড়ে চলেছে। ওই শোনো, পানফল জড়ো করতে মেয়েরা এসেছিল ; তারা বাড়ি ফিরছে রাত্রে গান গাইতে গাইতে । নগ্ন দেহে শুয়ে আছি বসন্তে সবুজ বনে । এতই আলস্য যে সাদা পালকের পাখাটা নড়াতে গা লাগছে না । টুপিটা রেখে দিয়েছি। ওই পাহাড়ের আগায়, পাইন গাছের ভিতর দিয়ে হাওয়া আসছে। আমার খালি মাথার ”পরে । আমার ছাটা চুল ছিল খাটাে, তাতে কপাল ঢাকত না । আমি দরজার সামনে খেলা করছিলুম, তুলছিলুম ফুল । তুমি এলে আমার প্রিয়, বঁাশের খেলা-ঘোড়ায় চড়ে, কঁচা কুল ছড়াতে ছড়াতে । চাঙকানের গলিতে আমরা থাকতুম কাছে কাছে। আমাদের বয়স ছিল অল্প, মন ছিল আনন্দে ভরা । তোমার সঙ্গে বিয়ে হল যখন আমি পড়লুম চোদয় । এত লজা ছিল যে হাসতে সাহস হত না, অন্ধকার কোণে থাকতুম মাথা হেঁট ক’রে, তুমি হাজার বার ডাকলেও মুখ ফেরাতুম না । পনেরো বছরে পড়তে আমার ভুরকুটি গেল ঘুচে, আমি হাসলুম।-- আমি যখন ষোলো তুমি গেলে দূর প্রবাসেচুটািঙের গিরিপথে, ঘূর্ণিজল আর পাথরের ঢিবির ভিতর দিয়ে । পঞ্চম মাস এল, আমার আর সহ্য হয় না । সেখানে তোমার পায়ের চিহ্ন সবুজ শ্যাওলায় চাপা পড়লসে শ্যাওলা এত ঘন যে বঁট দিয়ে সাফ করা যায় না ।