পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(VOO) রবীন্দ্র-রচনাবলী তুলে সাড়া দিলে আপন কেক ধ্বনিতেই। মধুসূদন সংগীতের দুৰ্নিবার উৎসাহ ঘোষণা করবার জন্যে আপন ভাষাকেই বক্ষে টেনে নিলেন । যে-যন্ত্র ছিল ক্ষীণ ধ্বনি একতারা তাকে অবজ্ঞা করে ত্যাগ করলেন না, তাতেই তিনি গভীর সুরের নানা তার চড়িয়ে তাকে রুদ্রবীণা করে তুললেন । এ যন্ত্র একেবারে নতুন, একমাত্র তারই আপন-গড়া । কিন্তু, তার এই সাহস তো ব্যর্থ হল না । অপরিচিত অমিত্ৰাক্ষর ছন্দের ঘনঘর্ঘরমন্দ্ৰিত রথে চড়ে বাংলাসাহিত্যে সেই প্রথম আবির্ভূত হল আধুনিক কাব্য ‘রাজবদুন্নতধ্বনি',- কিন্তু, তাকে সমাদরে আহবান করে নিতে বাংলাদেশে অধিক সময় তো লাগে নি। অথচ এর অনতিপূর্বকালবতী সাহিত্যের যে-নমুনা পাওয়া যায় তার সঙ্গে এর কি সুদূর তুলনাও 56 ।। আমি জানি, এখনো আমাদের দেশে এমন মানুষ পাওয়া যায় যারা সেই পুরাতনকালের অনুপ্রাসকণ্টকিত শিথিল ভাষার পৌরাণিক পাচালি প্রভৃতি গানকেই বিশুদ্ধ ন্যাশনাল সাহিত্য আখ্যা দিয়ে আধুনিক সাহিত্যের প্রতি প্রতিকূল কটাক্ষপাত করে থাকেন। বলা বাহুল্য, অধিকাংশ স্থলেই সেটা একটা ভান মাত্র । তারা যে স্বয়ং যথার্থত সেই সাহিত্যেরই রসসম্ভোগে একান্ত নিবিষ্ট থাকেন, রচনায় বা আলোচনায় তার প্রমাণ পাওয়া যায় না। ভূনির্মাণের কোনো এক আদিপর্বে হিমালয়পৰ্বতশ্রেণী স্থিতিলাভ করেছিল, আজ পর্যন্ত সে আর বিচলিত হয় নি ; পর্বতের পক্ষেই এটা সম্ভরপর । মানুষের চিত্ত তো স্থাণু ময় ; অন্তরে বাহিরে চার দিক থেকেই নানা প্রভাব তাঁর উপর নিয়ত কাজ করছে, তার অভিজ্ঞতার ব্যাপ্তি এবং অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে নিরন্তর ; সে যদি জড়বৎ অসাড় না হয় তা হলে তার আত্মপ্রকাশে বিচিত্র পরিবর্তন ঘটবেই, ন্যাশনাল আদর্শ নাম দিয়ে কোনো-একটি সুদূর ভূতকালবতী আদর্শবন্ধনে নিজেকে নিশ্চল করে রাখা তার পক্ষে স্বাভাবিক হতেই পারে না, যেমন স্বাভাবিক নয়। চীনে মেয়েদের পায়ের বন্ধন । সেই বন্ধনকে ন্যাশনাল নামের ছাপ দিয়ে গর্ব করা বিড়ম্বনা । সাহিত্যে বাঙালির মন অনেক কালের আচারসংকীর্ণতা থেকে অবিলম্বে মুক্তি যে পেয়েছিল, তাতে তার চিৎশক্তির অসামান্যতাই প্ৰমাণ করেছে । নবযুগের প্রাণবান সাহিত্যের স্পর্শে কল্পনাবৃত্তি যেই নবপ্রভাতে উদবোধিত হল অমনি মধুসূদনের প্রতিভা তখনকার বাংলাভাষার পায়ে-চলা পথকে আধুনিক কালের রথযাত্রার উপযোগী করে তোলাকে দুরাশা বলে মনে করলে না। আপন শক্তির পরে শ্রদ্ধা ছিল বলেই বাংলাভাষার পরে কবি শ্রদ্ধা প্রকাশ করলেন ; বাংলাভাষাকে নিভীকভাবে এমন আধুনিকতায় দীক্ষা দিলেন যা তার পূর্বানুবৃত্তি থেকে সম্পূৰ্ণ স্বতন্ত্র । বঙ্গবাণীকে গভীর স্বরনির্ঘোষে মন্দ্ৰিত করে তোেলবার জন্যে সংস্কৃতভাণ্ডার থেকে মধুসূদন নিংসকোচে যে-সব শব্দ আহরণ করতে লাগলেন সেও নূতন, বাংলা পয়ারের সনাতন সমদ্বিভক্ত আল ভেঙে দিয়ে তার উপর অমিত্ৰাক্ষরের যে-বন্যা বইয়ে দিলেন সেও নূতন, আর মহাকাব্য-খণ্ডকাব্য-রচনায় যে-রীতি অবলম্বন করলেন তাও বাংলাভাষায় নূতন । এটা ক্ৰমে ক্রমে, পাঠকের মনকে সইয়ে সইয়ে, সাবধানে ঘটল না ; শান্ত্রিক প্রথায় মঙ্গলাচরণের অপেক্ষা না রেখে কবিতাকে বহন করে নিয়ে এলেন এক মুহুর্তে ঝড়ের পিঠে- প্ৰাচীন সিংহদ্বারের আগল গেল GASCANS | মাইকেল সাহিত্যে যে-যুগান্তর আনলেন তার অনতিকাল পরেই আমার জন্ম । আমার যখন বয়স অল্প তখন দেখেছি, কত যুবক ইংরেজিসাহিত্যের সৌন্দর্যে ভাববিহবল ৷ শেকসপীিয়র, মিলটন, বায়রন, মেকলে, বার্ক তারা প্ৰবল উত্তেজনায় আবৃত্তি করে যেতেন পাতার পর পাতা। অথচ তাদের সমকালেই বাংলাসাহিত্যে যে নূতন প্রাণের উদ্যম সদ্য জেগে উঠেছে, সে তারা লক্ষ্যই করেন নি । সেটা যে অবধানের যোগ্য তাও তারা মনে করতেন না । সাহিত্যে তখন যেন ভোরের বোলা- কারও ঘুম ভেঙেছে, অনেকেরই ঘুম ভাঙে নি । আকাশে অরুণালোকের স্বাক্ষরে তখনো ঘোষিত হয় নি aNasiCN93. Ceirlyfrèsifil seNørret | বঙ্কিমের লেখনী তার কিছু পূর্বেই সাহিত্যের অভিযানে যাত্রা আরম্ভ করেছে। তখন অন্তঃপুরে বটতলার ফঁাকে ফঁাকে দুৰ্গেশনন্দিনী, মৃণালিনী, কপালকুণ্ডলা সঞ্চারণ করছে দেখতে পাই । যারা তার