পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(33 ब्रौव-ब्रछनावर्डी কেননা, হাজারই ইহাদিগকে নিন্দা করি আর ভয় দেখাই ইহারা যে চলিতেছে ; ইহারা যে প্ৰাণবান তাহার প্রমাণ যে ইহাদের নিজেরই মধ্যে । মরার বাড়া গালি নাই, এ কথা ইহাদের পক্ষে খাটে না । ইহারা জানে মরার বাড়াও গালি আছে- বাচিয়া মারা । ইহাদের জীবনযাত্রায় সংকটের সীমা নাই, সমস্যার গ্রন্থিও বিস্তর কিন্তু সকলের উপরে ইহাদিগকে ভরসা দিতেছে। ইহাদের প্রাণ । এইজন্য ইহারা নিন্দা অনায়াসে সহিতে পারে এবং নৈরাশ্যের কথাটাকে লইয়া ক্ষণকালের জন্য খেলা করে মাত্র, তাহাতে তাহাদের প্রাণের বেগে আর-একটু উত্তেজনার সঞ্চার করে । আমরাও তেমনি নিন্দা সহজে সহিতে পারিতাম। যদি পুরাদমে কাজের পথে চালিতাম । কারণ তাহা হইলে আপনিই বুঝিতে পারিতাম প্ৰাণের গতিতে সমস্ত গ্লানিকে ভাসাইয়া লইয়া যায়। পঙ্ক যখন অচল হইয়া থাকে তখন সেটা নিন্দিত, কিন্তু জোয়ারের গঙ্গাকে পঙ্কিল বলিয়া দোষ দিলেও যাহারা স্বান করে তাহদের তাহতে বাধা হয় না । এইজন্য, নিকৰ্মণ্য যে তাঁহারই অহোরাত্র স্তবের দরকার হয় । যে ধনীর কীর্তিও নাই, হাতে কোনো কর্মও নাই, চাটুকারের প্রয়োজন সব চেয়ে তাহারই অধিক, নহিলে সে আপনার জড়ত্বের বোঝা বহিবে কেমন করিয়া । তাহকে পরামর্শ দেওয়া উচিত যে, তোমার এই বনেদি স্থাবরত্ব গৌরব করিবার জিনিস নয়, যেমন করিয়া পার একটা কর্মে লাগিয়া যাও । কিন্তু এ স্থলে পরামর্শদাতার কাজটা নিরাপদ নহে, বাবুর পরিষদবর্গ তখনই ইহা হা করিয়া আসিবে । সুতরাং বকশিশের প্রত্যাশা থাকিলে বলিতে হয়, “হুজুর, আপনি যে সনাতন তাকিয়া ঠেসান দিয়া বসিয়াছেনউহার তুলার তৃপ জগতে অতুল, অতএব বংশের গীেরব যদি রাখিতে চান তো মড়িবেন না।” আমাদের সমাজে যে পরিমাণে কর্ম বন্ধ হইয়া আসিয়াছে সেই পরিমাণে বাহবার ঘটা বাডিয়া উঠিয়াছে। চলিতে গেলেই দেখি”সকল বিষয়েই পদে পদে কেবলই বাধে। এমন স্থলে হয় বলিতে হয়, খাচাটাকে ভাঙো, কারণ ওটা আমাদের ঈশ্বরদত্ত পাখাদুটিাকে অসাড় করিয়া দিল ; নয় বলিতে হয়, ঈশ্বরদত্ত পাখার চেয়ে খাচার লোহার শলাগুলো পবিত্র, কারণ, পাখা তো আজ উঠিতেছে আবার কাল পড়িতেছে কিন্তু লোহার শলাগুলো চিরকাল স্থির আছে। বিধাতার সৃষ্টি পাখা নূতন, আর কামারের সৃষ্টি খাচা সনাতন ; অতএব ঐ খাচার সীমাটুকুর মধ্যে যতটুকু পাখাঝাপট সম্ভব সেইটুকুই বিধি, তাহাঁই ধর্ম, আর তাহার বাহিরে অনন্ত আকাশ-ভরা নিষেধ । খাচার মধ্যে যদি নিতান্তই থাকিতে হয় তবে খাচার স্তব করিলে নিশ্চয়ই মন ঠাণ্ডা থাকে । আমাদের সামাজিক কামারে যে-শলাটি যেমন করিয়া বানাইয়াছে শিশুকাল হইতে তাঁহারই স্তবের বুলি পড়িয়া পড়িয়া আমরা অন্য সকল গান ভুলিয়াছি, কেননা অন্যথা করিলে বিপদের অন্ত নাই। আমাদের এখানে সকল দিকেই ঐ কামারেরই হইল জয়, আর সব চেয়ে বিড়ম্বিত হইলেন বিধাতা, যিনি আমাদিগকে কর্মশক্তি দিয়াছেন, যিনি মানুষ বলিয়া আমাদিগকে বুদ্ধি দিয়া গীেরবান্বিত করিয়াছেন । ধ্যাহারা বলিতেছেন যেখানে যাহা আছে সমস্তই বজায় থােক, তাহারা সকলেই আমাদের প্রণম্যকারণ, তাহদের বয়স অল্পই হউক আর বেশিই হউক তঁাহারা সকলেই প্ৰবীণ । সংসারে, তাহদের প্রয়োজন আমরা অস্বীকার করি না। পৃথিবীতে এমন সমাজ নাই যেখানে তাহারা দণ্ড ধরিয়া বসিয়া নাই । কিন্তু বিধাতার বরে যে-সমাজ বাচিয়া থাকিবে সে-সমাজে তাহদের দণ্ডই চরম বলিয়া মান পায় R | সেদিন একটি কুকুরহানাকে দেখা গেল, মাটির উপর দিয়া, একটি কীট চলিতেছে দেখিয়া তাহার ভারি কৌতুহল । সে তাহাকে শুকিতে শুকিতে তাহার অনুসরণ করিয়া চলিল। যেমনি পোকাটা একটু ধড়ফড় করিয়া উঠিতেছে আমনি কুকুরশাবক চমকিয়া পিছাইয়া আসিতেছে। দেখা গেল তাহার মধ্যে নিষেধ এবং তাগিদ দুটা জিনিসই আছে। প্ৰাণের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি এই যে, সমস্তকেই সে পরখ করিয়া দেখে। নূতন নূতন অভিজ্ঞতার পথ ধরিয়া সে আপনার অধিকার বিস্তার করিয়া চলিতে চায়। প্ৰাণ দুঃসাহসিক-বিপদের ঠোকর খাইলেও সে আপনার জয়যাত্রার পথ হইতে