পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

FNS ○ @ ○ তবে দয়ালু লোকের নাইট স্কুল খোলা অশ্রুবর্ষণ করিয়া অগ্নিদাহ নিবারণের চেষ্টার মতো হইবে । কারণ, এই লিখিতে পড়িতে শেখা তখনই যথার্থ ভাবে কাজে লাগিবে যখন তাহা দেশের মধ্যে সর্বব্যাপী হইবে । সোনার আঙটি কড়ে আঙুলের মাপে হইলেও চলে। কিন্তু একটা কাপড় সেই মাপের হইলে তাহা ঠাট্টার পক্ষেও নেহাত ছোটো হয়- দেহটাকে এক-আবরণে আবৃত করিতে পারিলেই তবে তাহা কাজে দেখে । সামান্য লিখিতে পড়িতে শেখা দুই-চারজনের মধ্যে বদ্ধ হইলে তাহা দামি জিনিস হয় না, কিন্তু সাধারণের মধ্যে ব্যাপ্ত হইলে তাহা দেশের লজা রক্ষা করিতে পারে । পূর্বেই বলিয়াছি শক্তির সঙ্গে শক্তির বোঝাপড়া হইলে তবেই সেটা সত্যকার কারবার হয়। এই সত্যকার কারবারে উভয় পক্ষেরই মঙ্গল । যুরোপে শ্রমজীবীরা যেমনি বলিষ্ঠ হইয়াছে আমনি সেখানকার বণিকরা জবাবদিহির দায়ে পড়িয়াছে। ইহাতেই দুই পক্ষের সম্বন্ধ সত্য হইয়া উঠিবেঅর্থাৎ যেটা বরাবর সহিবে সেইটেই দাড়াইয়া যাইবে, সেইটেই উভয়েরই পক্ষে কল্যাণের । স্ত্রীলোককে সাধবী রাখিবার জন্য পুরুষ সমস্ত সামাজিক শক্তিকে তাহার বিরুদ্ধে খাড়া করিয়া রাখিয়াছে- তাই স্ত্রীলোকের কাছে পুরুষের কোনো জবাবদিহি নাই- ইহাতেই স্ত্রীলোকের সহিত সম্বন্ধে পুরুষ সম্পূর্ণ কাপুরুষ হইয়া দাড়াইয়াছে ; স্ত্রীলোকের চেয়ে ইহাতে পুরুষের ক্ষতি অনেক বেশি । কারণ দুর্বলের সঙ্গে ব্যবহার করার মতো এমন দুৰ্গতিকর আর-কিছুই নাই । আমাদের সমাজ লোকসাধারণকে যে শক্তিহীন করিয়া রাখিয়াছে। এইখানেই সে নিজের শক্তিকে অপহরণ করিতেছে । পরের অস্ত্ৰ কাড়িয়া লইলে নিজের অস্ত্ৰ নিৰ্ভয়ে উচ্ছঙ্খল হইয়া উঠে- এইখানেই মানুষের পতন । আমাদের দেশের জনসাধারণ আজ জমিদারের, মহাজনের, রাজপুরুষের, মোটের উপর সমস্ত ভদ্রসাধারণের দয়ার অপেক্ষা রাখিতেছে, ইহাতে তাহারা ভদ্রসাধারণকে নামাইয়া দিয়াছে । আমরা ঠিকাইতে পারি ; নিম্নাতনদের সহিত ন্যায়ব্যবহার করা, মানহীনদের সহিত শিষ্টাচার করা নিতান্তই আমাদের ইচ্ছার পরে নির্ভর করে, অপর পক্ষের শক্তির ”পরে নহে, এই নিরস্তর সংকট হইতে নিজেদের বঁাচাইবার জন্যই আমাদের দরকার হইয়াছে নিম্নশ্রেণীয়দের শক্তিশালী করা । সেই শক্তি দিতে গেলেই তাহদের হাতে এমন একটি উপায় দিতে হইবে যাহাতে ক্ৰমে তাহারা পরস্পর সম্মিলিত হইতে পারে- সেই উপায়টিই তাহদের সকলকেই লিখিতে পড়িতে শেখানো । , VN: SV)SS অগ্রহায়ণের সবুজপত্রে সম্পাদক বর্তমান যুদ্ধ সম্বন্ধে যে কয়টি কথা বলিয়াছেন তাহা পাকা কথা, সুতরাং তাহাতে শাসও আছে রসও আছে। ইহার উপরে আর-বেশি কিছু বলিবার দরকার নাইসেই ভরসাতেই লিখিতে বসিলাম । সম্পাদক বেশ করিয়া বুঝাইয়া দিয়াছেন, এবারকার যে লড়াই তাহা সৈনিকে বণিকে লড়াই, ক্ষত্রিয়ে বৈশ্যে । পৃথিবীতে চিরকালই পুণ্যজীবীর ‘পরে অস্ত্ৰধারীর একটা স্বাভাবিক অবজ্ঞা আছেবৈশ্যের কর্তৃত্ব ক্ষত্রিয় সহিতে পারে না । তাই জর্মনি আপনি ক্ষত্ৰতেজের দৰ্পে ভারি একটা। অবজ্ঞার সহিত এই লড়াই করিতে লাগিয়াছে। য়ুরোপে যে চার বর্ণ আছে তার মধ্যে ব্ৰাহ্মণটি তার যজন-যাজন ছাড়িয়া দিয়া প্ৰায় সরিয়া পড়িয়াছেন । যে খৃস্টসংঘ বর্তমান য়ুরোপের শিশু বয়সে উচু চৌকিতে বসিয়া বেত হাতে গুরুমহাশয়গিরি করিয়াছে আজ সে তার বয়ঃপ্রাপ্ত শিষ্যের দেউড়ির কাছে বসিয়া থাকে- সাবেক কালের খাতিরে কিছু তার বরাদ বাধা আছে কিন্তু তার সেই চৌকিও নাই, তার সেই বেতগাছটাও