পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কালান্তর 666 রাজত্ব রাজাও সেইখানেই- জমা খরচ সব এক জায়গাতেই । কিন্তু এখন বাণিজ্যপ্রবাহের মতো রাজত্বপ্রবাহেরও দিনরাত আমদানি রফতানি চলিতেছে । ইহাতে পৃথিবীর ইতিহাসে সম্পূর্ণ একটা নূতন কাণ্ড ঘটিতেছে- তাহা এক দেশের উপর আর-এক দেশের রাজত্ব এবং সেই দুই দেশ সমুদ্রের দুই পারে । এত বড়ো বিপুল প্ৰভুত্ব জগতে আর-কখনো ছিল না । য়ুরোপের সেই প্ৰভুত্বের ক্ষেত্র এশিয়া ও আফ্রিকা । এখন মুশকিল হইয়াছে জর্মনির । তার ঘুম ভাঙিতে বিলম্ব হইয়াছিল। সে ভোজের শেষবেলায় হাপাইতে হাঁপাইতে আসিয়া উপস্থিত । ক্ষুধা যথেষ্ট, মাছেরও গন্ধ পাইতেছে অথচ কাটা ছাড়া আর বড়ো কিছু বাকি নাই। এখন রাগে তার শরীর গসাগস করিতেছে। সে বলিতেছে আমার জন্য যদি পাত পাড়া না হইয়া থাকে। আমি নিমন্ত্রণাপত্রের অপেক্ষা করিব না । আমি গায়ের জোরে যার পাই তার পাত কাড়িয়া লইব । এক সময় ছিল যখন কাড়িয়া-কুড়িয়া লইবার বেলায় ধর্মের দোহাই পাড়িবার কোনো দরকার ছিল না । এখন তার দরকার হইয়াছে । জর্মনির নীতিপ্রচারক পণ্ডিতেরা বলিতেছেন, যারা দুর্বল, ধর্মের দোহাই তাদেরই দরকার ; যার প্রবল তাদের ধর্মের প্রয়োজন নাই, নিজের গায়ের জোরই যথেষ্ট । আজ ক্ষুধিত জর্মনির বুলি এই যে, প্ৰভু এবং দাস এই দুই জাতের মানুষ আছে। প্ৰভু সমস্ত আপনার জন্য লইবে, দাস সমস্তই প্রভুর জন্য জোগাইবে- যার জোর আছে সে রথ। ইকাইবে, যার জোর নাই সে পথ করিয়া দিবে । য়ুরোপের বাহিরে যখন এই নীতির প্রচার হয় তখন যুরোপ ইহার কটুত্ব বুঝিতে পারে নাই । আজ তাহা নিজের গায়ে বাজিতেছে । কিন্তু জর্মন-পণ্ডিত যে তত্ত্ব আজ প্রচার করিতেছে এবং যে তত্ত্ব আজ মদের মতো জর্মনিকে অন্যায় যুদ্ধে মাতাল করিয়া তুলিল সে তত্ত্বের উৎপত্তি তো জর্মন-পণ্ডিতের মগজের মধ্যে নহে, বর্তমান য়ুরোপীেয় সভ্যতার ইতিহাসের মধ্যে । CS SOSY (छत्रों ७ व(छों যে সময়ে দেশের লোক তৃষিত চাতকের মতো উৎকণ্ঠিত, যে সময়ে রাষ্ট্ৰীয় আবহাওয়ার পর্যবেক্ষকেরা খবর দিলেন যে, হােমরুলের প্রবল মৈসুম-হাওয়া আরব-সমুদ্র পাড়ি দিয়াছে, মুষলধারে বৃষ্টি নামিল বলিয়া ; ঠিক সেই সময়েই মুষলধারে নামিল বেহার অঞ্চলে মুসলমানের প্রতি হিন্দুদের একটা হাঙ্গামা । অন্য দেশেও সাম্প্রদায়িক ঈর্ষাদ্বেষ লইয়া মাঝে মাঝে তুমুল দ্বত্বের কথা শুনি । আমাদের দেশে যে বিরোধ বাধে সে ধর্ম লইয়া, যদিচ আমরা মুখে সর্বদাই বড়াই করিয়া থাকি যে, ধর্মবিষয়ে হিন্দুর উদারতার তুলনা জগতে কোথাও নাই। বর্তমানকালে পশ্চিম মহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে যে বিরোধ বাধে তাহা অর্থ লইয়া । সেখানে খনির শ্রমিকেরা, সেখানে ডক ও রেলোয়ের কমিকেরা মাঝে মাঝে হুলস্থূল বাধাইয়া তোলে ; তাহা লইয়া আইন করিতে হয়, ফৌজ ডাকিতে হয়, আইন বন্ধ করিতে হয়, রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটে । সে-দেশে এইরূপ বিরোধের সময় দুই পক্ষ থাকে। এক পক্ষ উৎপাত করে, আর-এক পক্ষ উৎপাত নিবারণের উপায় চিন্তা করে। ব্যঙ্গপ্রিয় কোনো তৃতীয় পক্ষ সেখানে বাহির হইতে দুয়ো দেয় না । কিন্তু আমাদের দুঃখের বাসরঘরে শুধু যে বর ও কনের দ্বৈততত্ত্ব তাহা নহে, তৃতীয় একটি কুটুম্বিনী আছেন, অট্টহাস্য এবং কানমলার কাজে তিনি প্ৰস্তুত । SSRI OVe