পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ved 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী অত্যাচার-দুৰ্গতি অনেক দেখেছি, দূর সমুদ্রতীরে গিয়েও তাই দেখলুম। দেশে বিদেশে এরা শূদ্রধর্মপালন করছে। চীনকে অপমানিত করবার ভার প্রভুর হয়ে এরা গ্ৰহণ করেছে, সে সম্বন্ধে এরা কোনো বিচার করতেই চায় না ; কেননা এরা শূদ্রধর্মের হাওয়ায় মানুষ । নিমকের সহজ দাবি যতদূর পৌছায় এরা সহজেই তাকে বহু দূরে লঙ্ঘন করে যায় ; তাতে আনন্দ পায়, গর্ব বোধ করে । চীনের কাছ থেকে ইংরেজ যখন হংকঙ কেড়ে নিতে গিয়েছিল তখন এরাই চীনকে মেরেছে। চীনের বুকে এদেরই অন্ত্রের চিহ্ন অনেক আছে- সেই চীনের বুকে যে চীন আপনি হৃদয়ের মধ্যে ভারতবর্ষের বুদ্ধদেবের পদচিহ্ন ধারণ করেছিল, সেই ইৎসিং হিউয়েনসাঙের চীন । মানববিশ্বের আকাশে আজ যুদ্ধের কালো মেঘ চার দিকে ঘনিয়ে এসেছে। এ দিকে প্যাসিফিকের তীরে ইংরেজের তীক্ষচষ্ণু খরনখরদারুণ শোনতরণীর নীড় বাধা হচ্ছে। পশ্চিম মহাদেশে দিকে দিকে রব উঠেছে যে, এসিয়ার অস্ত্রশালায় শক্তিশেল তৈরি চলছে, য়ুরোপের মর্মের প্রতি তার লক্ষ । রক্তমোক্ষণক্লান্ত পীড়িত, এসিয়াও ক্ষণে ক্ষণে অস্থিরতার লক্ষণ দেখাচ্ছে। পূর্বমহাদেশের পূর্বতম প্ৰান্তে জাপান জেগেছে, চীনও তার দেওয়ালের চার দিকে সিদ্ধ কাটার শব্দে জাগবার উপক্রম করছে । হয়তো একদিন এই বিরাটকায় জাতি তার বন্ধন ছিন্ন করে উঠে দাড়াতে চেষ্টা করবে, হয়তো একদিন তার আফিমে আবিষ্ট দেহ বহুকালের বিষ ঝেড়ে ফেলে আপনার শক্তি উপলব্ধি করতে পারবে । চীনের থলিকুলি যারা ফুটাে করতে লেগেছিল তারা চীনের এই চৈতন্যলাভকে য়ুরোপের বিরুদ্ধে অপরাধ বলেই গণ্য করবে। তখন এসিয়ার মধ্যে এই শূদ্র ভারতবর্ষের কী কাজ । তখন সে যুরোপের কামারশালায় তৈরি লোহার শিকল কঁধে করে নির্বিচারে তার প্রাচীন বন্ধুকে বাধতে যাবে। সে মারবে, সে মরবো । কেন মারবে, কেন মরবে, এ কথা প্রশ্ন করতে তার ধর্মে নিষেধ । সে বলবো ; স্বধর্মে হননিং শ্ৰেয়ঃ স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়াঃ । ইংরেজ-সাম্রাজ্যের কোথাও সে সম্মান চায়ও না, পায়ও নাইংরেজের হয়ে সে কুলিগিরির বোঝা বয়ে মরে, যে বোঝার মধ্যে তার অর্থ নেই, পরমার্থ নেই ; ইংরেজের হয়ে পরকে সে তেড়ে মারতে যায়, যে পর তার শত্রু নয় ; কাজ সিদ্ধ হবা মাত্র আবার তাড়া খেয়ে তোষাখানার মধ্যে ঢোকে । শূদ্রের এই তো বহু যুগের দীক্ষা । তার কাজে স্বাৰ্থও নেই, সম্মানও নেই, আছে কেবল “স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ' এই বাণী । নিধনের অভাব হচ্ছে না ; কিন্তু তার চেয়েও মানুষের বড়ো দুৰ্গতি আছে যখন সে পরের স্বার্থের বাহন হয়ে পরের সর্বনাশ করাকেই অনায়াসে কর্তব্য বলে মনে করে । অতএব এতে আশ্চর্যের কথা নেই যে, যদি দৈবক্রমে কোনোদিন ব্রিটানিয়া ভারতবর্ষকে হারায় তা হলে নিশ্বাস ফেলে বলবো ; I miss my best servant. অগ্রহায়ণ ১৩৩২ বৃহত্তর ভারত বৃহত্তর ভারত পরিষদ-কর্তৃক অনুষ্ঠিত বিদায়সম্বর্ধনা উপলক্ষে যবদ্বীপ যাবার পূর্বাঢ়ে যে অভিনন্দন আপনারা আমাকে দিলেন তাতে আমার মনে বল সঞ্চার করবে । আমরা চার দিকের দাবির দ্বারা আমাদের প্রাণশক্তি আবিষ্কার করি । যার যা দেবার তা বাইরের নেবার ইচ্ছা থেকে আমরা দিতে সক্ষম হই । দাবির আর্কষণ যদি থাকে। তবে আপনি সহজ হয়ে যায় দেওয়ার 커 | বাইরে যেখানে দাবি সত্য হয় অন্তরে সেখানেই দানের শক্তি উদবোধিত হয়ে ওঠে। দানের সামগ্ৰী আমাদের থাকলেও আমরা দিতে পারি নে, সমাজে যতক্ষণ প্ৰত্যাশা না সজীব হয়ে ওঠে । আজ একটা আকাঙক্ষা আমাদের মধ্যে জেগেছে যে আকাঙক্ষা ভারতের বাইরেও ভারতকে বড়ো করে