পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী اما که ما সেই যুগ আজ সমাগত । আজ যদি আমাদের মধ্যে প্ৰেম না আসে, কঠিন কঠোর নিষ্ঠুর অবজ্ঞা মানুষের থেকে মানুষকে দূব করে রাখে। তবে বাচব কী করে । রাউন্ড টেবিলে গিয়ে, ভোটের সংখ্যা। নিয়ে কড়াকড়ি করে ? পশুর প্রতি আমরা যে ব্যবহার করি মানুষকে যদি তার চেয়েও অধম স্থান দিই তবে সেই অধমত কি আমাদের সমস্ত সমাজেরই বুকের উপব চেপে বসবে না ! মানুষকে কৃত্ৰিম পুণ্যের দোহাই দিয়ে দূরে রেখেছি, তারই অভিশাপে আজ সমস্ত জাতি অভিশপ্ত । দেশজোড়া এতবডো মোহকে যদি আমরা ধর্মের সিংহাসনে স্থির-প্রতিষ্ঠা করে বসিয়ে রাখি। তবে শক্রকে বাইবে খোজবাব বিড়ম্বনা কেন । নবযুগ আসে বডো দুঃখের মধ্য দিয়ে । এত আঘাত এত অপমান বিধাতা আমাদেব দিতেন না। যদি এর প্রয়োজন না থাকত । অসহ্য বেদনায় আমাদের প্রাযশ্চিত্ত চলছে, এখনো তাৰ শেষ হয় নি । কোনো বাহ পদ্ধতিতে পাবের কাছে ভিক্ষা কবে আমরা স্বাধীনতা পাব না ; কোনো সত্যকেই এমন করে পাওস্যা যায় না ; মানবের যা সত্যবস্তু সেই প্ৰেমকে আমবা যদি অন্তবে জাগকক করতে পাবি তবেই আমরা সব দিকে সার্থক হব । প্ৰেম থেকে যেখানে ভ্ৰষ্ট হই সেখানেই অশুচিতা, কেননা সেখান থেকে আমাদেব দেবতার তিরোধান | আমাদের শাস্ত্রেও বলছেন, যদি সত্যকে চাও। তবে অন্যের মধ্যে নিজেকে স্বীকার করে । সেই সত্যেই পুণ্য এবং সেই সত্যের সাহায্যেই পাবাধীনতার বন্ধনও ছিন্ন হবে । মানুষের সম্বন্ধে হৃদয়ের যে সংকোচ তার চেয়ে কঠোর বন্ধন আব্ব নেই । মানুষকে মানুষ বলে দেখতে না পারার মতো এত বড়ো সর্বনেশে অন্ধতা আর নেই । এই বন্ধন এই অন্ধতা নিয়ে কোনো মুক্তিই আমরা পাব না। } যে মোহে আবৃত হয়ে মানুষের সত্য রূপ দেখতে পেলুম না সেই অপ্রেমের অবজ্ঞাব বন্ধন ছিন্ন হয়ে যাক, যা যথার্থভাবে পবিত্র তাকে যেন সত্য করে গ্রহণ করতে পাবি ! q (os y SSS (།། আজ একটি বিশেষ নির্দিষ্ট দিনে বন্দীদের দুঃখে দরদ জানাবার জন্যে তোমরা সভা আহবান করেছ । সম্প্রতি আমাদের দেশে বিশেষ উপলক্ষে বিশেষ দিনে দল বেঁধে আন্দোলন করবার একটা রীতি দাড়িয়ে যাচ্ছে । তাতে কিছুক্ষণের জন্যে নিজেদের নালিশ উপভোগ করবার একটা নেশায় আমাদের পেয়ে বসে । সেটার রাষ্ট্রীয় সার্থকতা যদি কিছু থাকে তো থাক, কিন্তু ক্ষণে ক্ষণে এইরকম পোলিটিকাল দশা পাওয়ার উত্তেজনা উদ্রেক করা আমাদের এখানকার কাজের ও ভাবের সঙ্গে সংগত হয় বলে আমি মনে করি নে ? দেশের বিশেষ অনুরোধে ও প্রয়োজনে আমার যা বলবার সে আমি আশ্রমের বাইরে যথোচিত জায়গায় বলেছি, আজ আমাব এখানে কিছু যদি বলতে হয় তবে আমি বলব, প্রচলিত দণ্ডনীতি সম্বন্ধে আমার সাধারণ মন্তব্য । মনে আছে, ছেলেবেলায় পুলিসকে একটা প্ৰকাণ্ড বিভীষিকা-বিভাগের অন্তর্গত বলে মনে করতুম | যেমন স্বাভাবিক মানবজীবনের সঙ্গে দৈত্যদানব-ভূতপ্রেতের সহজ সামঞ্জস্য নেই, এ যেন সেইরকম । তাই তখন মনে করতুম, চােরও বুঝি মানুষ-জাতির স্বভাবগণ্ডির অত্যন্ত বাইরেকার বিকৃতি । এমন সময় চোরকে স্বচক্ষে দেখলুম, আমাদেরই বাড়ি থেকে অত্যন্ত ত্ৰস্ত হয়ে দারোয়ানদের লক্ষ্য এড়িয়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। বিস্মিত হয়ে দেখলুম, সে নিতান্ত সাধারণ মানুষেরই মতো, এমন-কি, তার চেয়ে দুর্বল ।