পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্ৰন্থপরিচয় S6 সম্মতি দিলেন । তাই আজ সাহস করে আপনাদের কাছে দাড়িয়েছি, আপনাদের কাছে মুখে বলবার স্পর্ধা। আমার স্বভাব-সংগত নয় । মনে করেছিলেম, আমি তরুণ ছাত্রমণ্ডলীর সঙ্গে বসে বসে কিছু বলব। হয়তো দুই-তিনশো। ছাত্র হবে- তাদের মোকাবিলায় সাহিত্যপ্রসঙ্গ নিয়ে সহজভাবে কিছু আলাপ ক’রে যাব । তাই সাহস ক’রে রাজি হয়েছিলেম । যখন মুখে বলি তখন অনেক সময়ই চিন্তা করে বলতে পারি নে— তার কারণ আমার স্মরণশক্তির দুর্বলতা । লোকে যাকে পয়েন্ট বা ব্যাখ্যানসূচি বলে সে-সব আমি মনে ধারণ করে রাখতে পারি নে। বলবার সময় সূচিগুলি হারিয়ে তার পরে সেই হারাধনের পিছনে পিছনে মনকে হঠাৎ দৌড় করতে পাঠালে, আসল কাজটার বড়ো ব্যাঘাত ঘটে । তাই দুৰ্দৈবক্রমে বক্তৃতাসভায় আমার ডাক পড়লে আমার রসনাকে আমার ভাগ্যের হাতে সমর্পণ ক’রে দিই। অর্থাৎ, সেই সময় যেমন চিন্তার ধারা আসে তারই অনুবর্তন করে যাই । এ ছাড়া অন্য উপায় আমার হাতে নেই ! আজ আমার বলবার বিষয়টি হচ্ছে সাহিত্য । আর-কিছু না হােক, অন্তত পঞ্চাশ বছর ধরে বাল্যকাল থেকেই হাতে-কলমে সাহিত্য নিয়েই আছি । এই সম্বন্ধে অন্য মনীষীদের আলোচিত উপদেশে যদিও কিছু শিক্ষা করতে পারি নি, তবু ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে এই বিষয়ে আমার কিছু বলবার অধিকার আছে । নিরন্তর সাহিত্যপ্রবাহ ব’য়ে ব’য়ে আমার অন্তর-প্রকাতির মধ্যে যো-পথ তৈরি হয়েছে সেই পথ দিয়ে আজকার দিনের আলোচনা হয়তো একটা ধারাবাহিক রূপ ধারণ করতেও পারে । আপনা হতেই সেটা হবে এই আশাতেই আজ এখানে এসেছি । অল্প কিছুদিন হল একটি ছাত্র- ভারতেরই একটু পশ্চিমের কোনো কলেজের ছাত্ৰ— হঠাৎ একদিন আমার প্রভাতস্রমণের সময় আমার সঙ্গ ধরলেন । তিনি বললেন, একটি প্রশ্ন আছে । <(61 °Csfer (5 SS 43Giri : Is art too good for human nature's daily food? বুঝলেম এই প্রশ্নের মূলে বহুলোকের মধ্যে প্রচলিত একটি তর্ক আছে। সে তর্কটি এই যে, যে-সকল সাহিত্য বা শিল্পরচনার প্রয়াস আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার আনুকূল্য করে, মানুষকে ভালো করে বা সমৃদ্ধ করে বা সুদক্ষ করে, তার সামাজিক বা অন্য কোনোপ্রকার সমস্যাপূরণের সহায়তা করে, সেই আটই শ্রেষ্ঠ কি না । অর্থাৎ, কেবলমাত্র চিত্তবিনোদনই আটের উৎকর্ষের আদর্শ কি না । সেই ছাত্রটির এই প্ৰশ্নই আমি আজকের সভায় মনের মধ্যে ক’রে নিয়ে এসেছি । এই প্রশ্নের সূত্রটিকেই অবলম্বন করে, চিন্তা ও ব্যাখ্যা করে যাওয়া আমার পক্ষে সহজ হবে । এর উত্তর দিতে গেলে আর্ট সম্বন্ধে আমার সাধ্যমত গোড়া ঘেঁষে কথাটা বলতে হবে । নইলে কোনো ছোটো নিম্পত্তিতে চলবে না । নিজেকে জিজ্ঞাসা করতে হবে কলাকারু সম্বন্ধে মানুষের এত বিচিত্ৰ প্ৰয়াসের তাৎপর্যটা কোথায় আছে । যুগযুগান্তর থেকে মানব এই যে-সকল রূপরচনায় প্ৰবৃত্ত হয়ে আছে, যে-রচনা চিরকাল ধরে সকলের বহুপুরস্কৃত, মানবের সেই চেষ্টার মূল উৎস কোথায় । তা যদি ঠিকমত নিৰ্ণয় করতে পারি তা হলেই বুঝতে পারব, আর্টের সঙ্গে মানবজীবনের সম্বন্ধ কী এবং মানুষের প্রাণধারণের চেষ্টার পক্ষে তার উপযোগিতা কতটুকু ! এই মূল অনুসরণ করতে গেলে মধ্যপথে থামবার জো নেই, একেবারে তত্ত্বজ্ঞানের কোঠায় গিয়ে পৌছতে হয় এবং সেই তত্ত্বজ্ঞানের আশ্রয় অসীমের রাজে { সত্যের সন্ধানে অসীমের পথে অভিযান আমাদের ভারতীয় প্রকৃতিগত হয়তো কোনো ইংরেজ শ্রোতৃমণ্ডলীর সমক্ষে আট সম্বন্ধে আলোচনাকে এত সুদূরে নিয়ে গিয়ে দাড় করাতে আমার সংকোচ হত যদি-বা সাহস ক’রে এ কাজে প্ৰবৃত্ত হতেম তা হলে গোডাতেই ‘ওরিএন্টাল মিসটাসিজম নামধারী এক স্বরচিত কুহেলিকার অন্তরাল থেকে হয়তো আমার কথাগুলিকে তঁরা কিঞ্চিৎ অশ্রদ্ধামিশ্রিত কৌতুহলের সঙ্গে অস্পষ্ট করে শুনতেন । কিন্তু, বর্তমান ক্ষেত্রে আমার ভরসার কারণ এই যে, >こ !」8 と