পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রথযাত্রা ১৬৭ পুরোহিত। চোখ বোজ রে তোরা সব, সবাই চোখ বোজ ! ক্রুদ্ধ মহাকালের মূতি দেখলে তোরা ভস্ম হয়ে যাবি। সৈনিক । ও কী ও ! এ কি চাকারই শব্দ না কী ? না আকাশ আর্তনাদ করে উঠল ? পুরোহিত। হতেই পারে না । নাগরিক। ওই তো নড়ল যেন। সৈনিক। ধুলো উড়েছে যে। অন্যায়, ঘোর অন্তায় ! রথ চলেছে ! পাপ ! মহাপাপ ! শূত্রদল। জয়, জয় মহাকালের জয় ! পুরোহিত। তাই তো, এ কী কাগু হল ! সৈনিক। ঠাকুর, হুকুম করো। আমাদের সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এই অপবিত্র রথ চলা বন্ধ করে দিই । পুরোহিত । হুকুম করতে তো সাহস হয় না। বাবা স্বয়ং যদি ইচ্ছে করে জাত খোয়ান, আমাদের হুকুমে তার প্রায়শ্চিত্ত হবে না । সৈনিক। তা হলে ফেলে দিই আমাদের অস্ত্ৰ ! পুরোহিত। আর আমিও ফেলে দিই আমার পুথিপত্র ! নাগরিকগণ । আমরা যাই সব নগর ছেড়ে ! মন্ত্রীমশায়, তুমি কী করবে। কোথায় যাচ্ছ । মন্ত্রী। আমি যাচ্ছি ওদের সঙ্গে মিলে রশি ধরতে । সৈনিক । ওদের সঙ্গে মিলবে ? মন্ত্রী। তা হলেই বাবা প্রসন্ন হবেন। স্পষ্ট দেখছি ওরা যে আজ র্তার প্রসাদ পেয়েছে। এ তো স্বপ্ন নয়, মায়া নয়। ওদের থেকে পিছিয়ে পড়ে আজ কেউ মান রক্ষা করতে পারবে না, মান ওদের সঙ্গে থেকে । সৈনিক । কিন্তু তাই বলে ওদের সঙ্গে সার মিলিয়ে রশি ধরা ! ঠেকাবই ওদের। দলবল ডাকতে চললুম। মহাকালের রথের পথ রক্তে কাদা হয়ে যাবে। পুরোহিত। আমিও তোমাদের সঙ্গে যাব, মন্ত্রণা দেবার কাজে লাগতে পারব। মন্ত্রী । ঠেকাতে পারবে না । এবার দেখছি চাকার তলায় তোমাদেরই পড়তে হবে। সৈনিক। তাই সই। বাবার রথের চাকা এতদিন যত-সব চণ্ডালের মাংস খেয়ে অশুচি হয়ে আছে । আজ শুদ্ধ মাংস পাবে।