পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রথযাত্রা ১৬৯ কবির প্রবেশ ২ সৈনিক । কবি, আজ রথযাত্রায় এই যে-সব উলটো-পালট কাগু হয়ে গেল, কেন বুঝতে পারো ? কবি । পারি বৈকি । ১ সৈনিক । পুরুতের হাতে, রাজার হাতে রথ চলল না, এর মানে কী । কবি । ওরা ভুলে গিয়েছিল মহাকালের শুধু রথকে মানলেই হল না, মহাকালের রথের দড়িকেও মানা চাই । ১ সৈনিক। কবি, তোমার কথা শুনলে হঠাৎ মনে হয়, হয়তো বা একটা মানে আছে। খুজতে গেলে পাওয়া যায় না। * কবি । ওরা বাধন মানতে চায় নি, শুধু চলাকেই মেনেছিল। তাই রাগী বাধনটা উন্মত্ত হয়ে ওদের উপর লেজ আছড়াচ্ছে, গুড়িয়ে যাবে। পুরোহিত। আর তোমার শূত্রগুলোই কি এত বুদ্ধিমান যে দড়ির নিয়ম সামলে চলতে পারবে । কবি । হয়তে পারবে না। একদিন ভাববে ওরাই রথের কর্তা, তখনই মরবার সময় আসবে। দেখো-না, কালই বলতে শুরু করবে, আমাদেরই হাল লাঙল চরকা র্তীতের জয় । যে বিধাতা মানুষের বুদ্ধিবিদ্যা নিজের হাতে গড়েছেন, অস্তরে বাহিরে অমৃতরস ঢেলে দিয়েছেন, তাকে গাল পাড়তে বসবে। তখন এরাই হয়ে উঠবেন বলরামের চেলা, হলধরের মাতলামিতে জগৎটা লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে। পুরোহিত। তখন আবার রথ অচল হলে বোধ করি কবিদের ডাক পড়বে। কবি । ঠাট্ট নয় পুরুতঠাকুর । মহাকাল বারেবারেই রথযাত্রায় কবিদের ডেকেছেন। তারা কাজের লোকের ভিড় ঠেলে পৌছতে পারে নি। পুরোহিত। তার চালাবে কিসের জোরে । কবি । গায়ের জোরে নয়ই। আমরা মানি ছন্দ, আমরা জানি এক-বেীকা হলেই তাল কাটে। আমরা জানি সুন্দরকে কর্ণধার করলেই শক্তির তরী সত্যি বশ মানে। তোমরা বিশ্বাস কর কঠোরকে-- শাস্ত্রের কঠোর বা অস্ত্রের কঠোর— সেটা হল ভীরুর বিশ্বাস, দুর্বলের বিশ্বাস, অসাড়ের বিশ্বাস। সৈনিক। ওহে কবি, তুমি তো উপদেশ দিতে বসলে, ও দিকে যে আগুন লাগল। কবি । যুগে যুগে কতবার কত আগুন লেগেছে। যা থাকবার তা থাকবেই। সৈনিক। তুমি কী করবে।