পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ >>)○ এই অভাবনীয় সৌভাগ্যে রুদ্ধকণ্ঠে কিছুক্ষণ কথাই কহিতে পারিলেন না। মনে করিলেন, কিছু একটা ভ্রম হইয়াছে। কহিলেন, “আমার কন্যাকে তুমি বিবাহ করিবে ?” কাস্তি কহিলেন, “আপনার যদি সম্মতি থাকে, আমি প্রস্তুত আছি।” নবীন আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, "সুধাকে ?”— উত্তরে শুনিলেন, “হঁ৷ ” নবীন স্থিরভাবে কহিলেন, “তা দেখাশোনা—” কান্তি যেন দেখেন নাই, ভান করিয়া কহিলেন, “সেই একেবারে শুভদৃষ্টির সময়।” নবীন গদগদকণ্ঠে কহিলেন, “আমার সুধা বড়ো সুশীলা মেয়ে, রাধাবাড়া ঘরকন্নার কাজে অদ্বিতীয়। তুমি যেমন না দেখিয়াই তাহাকে বিবাহ করিতে প্রস্তুত হইয়াছ তেমনি আশীর্বাদ করি, আমার সুধা পতিব্ৰতা সতীলক্ষ্মী হইয়। চিরকাল তোমার মঙ্গল করুক। কখনো মুহূর্তের জন্য তোমার পরিতাপের কারণ না ঘটুক ।” কাস্তি আর বিলম্ব করিতে চাহিলেন না, মাঘ মাসেই বিবাহ স্থির হইয়া গেল । পাড়ার মজুমদারদের পুরাতন কোঠাবাড়িতে বিবাহের স্থান নির্দিষ্ট হইয়াছে। বর হাতি চড়িয়া মশাল জালাইয়া বাজনা বাজাইয়া যথাসময়ে আসিয়া উপস্থিত। শুভদৃষ্টির সময় বর কন্যার মুখের দিকে চাহিলেন। নতশির টোপর-পরা চন্দনচর্চিত সুধাকে ভালো করিয়া যেন দেখিতে পাইলেন না। উদবেলিত হৃদয়ের আনন্দে চোখে যেন ধাধা লাগিল । বাসরঘরে পাড়ার সরকারি ঠানদিদি যখন বরকে দিয়া জোর করিয়া মেয়ের ঘোমটা খোলাইয়া দিলেন তখন কাস্তি হঠাৎ চমকিয়া উঠিলেন। এ তো সেই মেয়ে নয়। হঠাৎ বুকের কাছ হইতে একট। কালো বজ্র উঠিয়া র্তাহার মস্তিষ্ককে যেন আঘাত করিল, মুহূর্তে বাসরঘরের সমস্ত প্রদীপ যেন অন্ধকার হইয়া গেল এবং সেই অন্ধকারপ্লাবনে নববধূর মুখখানিকেও যেন কালিমালিপ্ত করিয়া দিল । কান্তিচন্দ্র দ্বিতীয়বার বিবাহ করিবেন না বলিয়া মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন ; সেই প্রতিজ্ঞ কি এমনি একটা অদ্ভুত পরিহাসে অদৃষ্ট তুড়ি দিয়া ভাঙিয়া দিল! কত ভালো ভালো বিবাহের প্রস্তাব অগ্রাহ করিয়াছেন, কত আত্মীয়-বন্ধুবান্ধবদের সামুনয় অনুরোধ অবহেলা করিয়াছেন ; উচ্চকুটুম্বিতার আকর্ষণ, অর্থের প্রলোভন, রূপখ্যাতির মোহ সমস্ত কাটাইয়। অবশেষে কোন-এক অজ্ঞাত পল্লীগ্রামে বিলের ধারে এক অজ্ঞাত দরিত্রের ঘরে এতবড়ে বিড়ম্বন, লোকের কাছে মুখ দেখাইবেন কী করিয়া। শ্বশুরের উপরে প্রথমটা রাগ হইল। প্রতারক এক মেয়ে দেখাইয়া আর-এক