পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S o o রবীন্দ্র-রচনাবলী খাইয়া ফিরিলে শিবতলী গ্রামের অপমান ; সেই অপমান ঠেকাইবার জন্য গোয়ালার প্রচুর ছানার বন্দোবস্ত করিয়াছে। বরযাত্রগণ পরামর্শ করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “যত আবখ্যক ছানা জোগাইতে পরিবে তো ?” -- যজ্ঞেশ্বর কথঞ্চিৎ অশান্বিত হইয়া কহিল, “ত পারিব।” *আচ্ছ। তবে অানো” বলিয়া বরযাত্ৰগণ বসিয়া গেল। গৌরসুন্দর বসিলেন না, তিনি নীরবে এক প্রাস্তে দাড়াইয়া কৌতুক দেখিতে লাগিলেন। আহারস্থানের চারি দিকেই পুষ্করিণী ভরিয়া উঠিয়া জলে কাদায় একাকার হইয়া গেছে। যজ্ঞেশ্বর যেমন যেমন পাতে ছানা দিয়া যাইতে লাগিলেন তৎক্ষণাৎ বরযাত্রগণ তাহা কঁাধ ডিঙাইয়া পশ্চাতে কাদার মধ্যে টপ টপ করিয়া ফেলিয়া দিতে লাগিল । উপায়বিহীন যজ্ঞেশ্বরের চক্ষু জলে ভাসিয়া গেল। বারম্বার সকলের কাছে জোড়হাত করিতে লাগিলেন ; কহিলেন, “আমি অতি ক্ষুদ্র ব্যক্তি, আপনাদের নির্যাতনের যোগ্য নই।” একজন শুষ্কহাস্য হাসিয়া উত্তর করিল, “মেয়ের বাপ তো বটেন, সে অপরাধ যায় কোথায়।” যজ্ঞেশ্বরের স্বগ্রামের বৃদ্ধগণ বারবার ধিক্কার করিয়া বলিতে লাগিল, “তোমার যেমন অবস্থা সেইমত ঘরে কন্যাদান করিলেই এ দুর্গতি ঘটিত না।” এ দিকে অস্তঃপুরে মেয়ের দিদিম। অকল্যাণশঙ্কাসত্ত্বেও অশ্র সংবরণ করিতে পারিলেন না। দেখিয়া মেয়ের চোখ দিয়া জল পড়িতে লাগিল। যজ্ঞেশ্বরের জ্যাঠাইম আসিয়া বিভূতিকে কহিলেন, “ভাই, অপরাধ যা হইবার তা তো হইয়া গেছে, এখন মাপ করো, আজিকার মতে শুভকর্ম সম্পন্ন হইতে দাও।” এ দিকে ছানার অন্যায় অপব্যয় দেখিয়া গোয়ালার দল রাগিয়া হাঙ্গামা করিতে উদ্যত। পাছে বরযাত্রদের সহিত তাহদের একটা বিবাদ বাধিয়া যায় এই আশঙ্কায় যজ্ঞেশ্বর তাহাদিগকে ঠাণ্ডা করিবার জন্ত বহুতর চেষ্টা করিতে লাগিলেন । এমন সময় ভোজনশালায় অসময়ে বর আসিয়া উপস্থিত। বরযাত্ররা ভাবিল, বর বুঝি রাগ করিয়া অস্তঃপুর হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছেন, তাহাদের উৎসাহ বাড়িয়া উঠিল। বিভূতি রুদ্ধকণ্ঠে কহিলেন, “বাবা, আমাদের এ কিরকম ব্যবহার।” বলিয়া একটা ছানার থালা স্বহস্তে লইয়া তিনি পরিবেশনে প্রবৃত্ত হইলেন। গোয়ালাদিগকে বলিলেন, “তোমরা পশ্চাৎ দাড়াও, কাহারো ছানা যদি পাকে পড়ে তো সেগুলা আবার পাতে তুলিয়া দিতে হইবে।”