পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२ ०२ রবীন্দ্র-রচনাবলী ইতিমধ্যে নায়েব গ্রামে অতিমাত্রায় খাজনা বৃদ্ধির চেষ্টা করায় প্রজারা বিদ্রোহী হইল। হরিহরের সমস্ত ব্রহ্মোত্তর জমা, জমিদারের সঙ্গে কোনো সম্বন্ধ নাই। নায়েব তাহার প্রভুকে জানাইল, হরিহরই প্রজাদিগকে প্রশ্রয় দিয়া বিদ্রোহী করিয়া তুলিয়াছে। জমিদার কহিলেন, “যেমন করিয়া পার ভট্টাচার্যকে শাসন করে।” নায়েব ভট্টাচার্যের পদধূলি লইয়া কহিল, “সামনের ওই জমিট পরগনার ভিটার মধ্যে পড়িতেছে ; ওটা তো ছাড়িয়া দিতে হয় ।” হরিহর কহিলেন, “সে কী কথা। ও যে আমার বহুকালের ব্রহ্মত্র।” হরিহরের গৃহপ্রাঙ্গণের সংলগ্ন পৈতৃক জমি জমিদারের পরগনার অন্তর্গত বলিয়া নালিশ রুজু হইল। হরিহর বলিলেন, “এ জমিট তো তবে ছাড়িয়া দিতে হয়, আমি তো বৃদ্ধ বয়সে আদালতে সাক্ষী দিতে পারিব না।” ছেলেরা বলিল, “বাড়ির সংলগ্ন জমিটাই যদি ছাড়িয়া দিতে হয় তবে ভিটায় টিকিব কী করিয়৷ ” প্রাণাধিক পৈতৃক ভিটার মায়ায় বৃদ্ধ কম্পিতপদে আদালতের সাক্ষ্যমঞ্চে গিয়৷ দাড়াইলেন। মুন্সেফ নবগোপালবাবু তাহার সাক্ষ্যই প্রামাণ্য করিয়া মকদ্দমা ডিসমিস করিয়া দিলেন । ভট্টাচার্যের খাস প্রজারা ইহা লইয়া গ্রামে ভারি উংসবসমারোহ আরম্ভ করিয়া দিল । হরিহর তাড়াতাড়ি তাহাদিগকে থামাইয়া দিলেন । নায়েব আসিয়া পরম আড়ম্বরে ভট্টাচার্যের পদধূলি লইয়া গায়ে মাথায় মাখিল এবং আপিল রুজু করিল। উকিলরা হরিহরের নিকট হইতে টাকা লন না। র্তাহারা ব্রাহ্মণকে বারম্বার আশ্বাস দিলেন, এ মকদ্দমায় হারিবার কোনো সম্ভাবনা নাই। দিন কি কখনো রাত হইতে পারে। শুনিয়া হরিহর নিশ্চিন্ত হইয়া ঘরে বসিয়া রহিলেন । একদিন জমিদারি কাছারিতে ঢাকঢোল বাজিয়া উঠিল, পাঠ কাটিয়া নায়েবের বাসায় কালীপূজা হইবে । ব্যাপারখানা কী । ভট্টাচার্য খবর পাইলেন, আপিলে র্তাহার হার হইয়াছে। ভট্টাচার্য মাথা চাপড়াইয়া উকিলকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “বসস্তবাবু, করিলেন কী। আমার কী দশা হইবে।” দিন যে কেমন করিয়া রাত হইল, বসন্তবাবু তাহার নিগৃঢ় বৃত্তান্ত বলিলেন, “সম্প্রতি ধিনি নূতন অ্যাডিশনাল জজ হইয়া আদিয়াছেন তিনি মুন্সেফ থাকা কালে মুন্সেফ নবগোপালবাবুর সহিত র্তাহার ভারি থিটমিটি বাধিয়াছিল। তখন কিছু করিয়া উঠিতে পারেন নাই ; আজ জজের আসনে বসিয়া নবগোপালবাবুর রায় পাইবামাত্র উলটাইয়া দিতেছেন ; আপনি হারিলেন সেইজন্য * ব্যাকুল হরিহর কহিলেন, “হাইকোর্টে ইহার কোনো আপিল নাই?” বসন্ত কহিলেন, “জজবাবু আপিলে