পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ۵ ه با ফল পাইবার সম্ভাবনা মাত্র রাখেন নাই । তিনি আপনাদের সাক্ষীকে সন্দেহ করিয়া বিরুদ্ধ পক্ষের সাক্ষীকেই বিশ্বাস করিয়া গিয়াছেন । হাইকোর্টে তে সাক্ষীর বিচার হইবে না।” বৃদ্ধ সাশ্রনেত্ৰে কহিলেন, “তবে আমার উপায় ?” উকিল কহিলেন, “উপায় কিছুই দেখি না।” গিরিশ বস্তু পরদিন লোকজন সঙ্গে লইয়া ঘটা করিয়া ব্রাহ্মণের পদধূলি লইয়া গেল এবং বিদায়কালে উচ্ছসিত দীর্ঘনিশ্বাসে কহিল, “প্ৰভু, তোমারই ইচ্ছা।” প্রতিবেশিনী আমার প্রতিবেশিনী বালবিধবা । যেন শরতের শিশিরাশ্রীপুত শেফালির মতে বৃস্তচু্যত ; কোনো বাসরগুহের ফুলশয্যার জন্য সে নহে, সে কেবল দেবপূজার জন্যই উৎসর্গ-করা । তাহাকে আমি মনে মনে পূজা করিতাম। তাহার প্রতি আমার মনের ভাবটা যে কী ছিল পূজা ছাড়া তাহ অন্য কোনো সহজ ভাষায় প্রকাশ করিতে ইচ্ছা করি না— পরের কাছে তো নয়ই, নিজের কাছেও না । আমার অন্তরঙ্গ প্ৰিয়বন্ধু নবীনমাধব, সেও কিছু জানিত না। এইরূপে এই যে আমার গভীরতম আবেগটিকে গোপন করিয়া নির্মল করিয়া রাখিয়াছিলাম, ইহাতে আমি কিছু গর্ব অনুভব করিতাম । কিন্তু মনের বেগ পার্বতী নদীর মতো নিজের জন্মশিখরে আবদ্ধ হইয়া থাকিতে চাহে না । কোনো একটা উপায়ে বাহির হইবার চেষ্টা করে। অকৃতকার্য হইলে বক্ষের মধ্যে বেদনার স্বষ্টি করিতে থাকে। তাই ভাবিতেছিলাম, কবিতায় ভাব প্রকাশ করিব। কিন্তু কুষ্ঠিতা লেখনী কিছুতেই অগ্রসর হইতে চাহিল না। পরমাশ্চর্যের বিষয় এই যে, ঠিক এই সময়েই আমার বন্ধু নবীনমাধবের অকস্মাৎ বিপুল বেগে কবিতা লিখিবার ঝোক আসিল, যেন হঠাৎ ভূমিকম্পের মতো। সে বেচারার এরূপ দৈববিপত্তি পূর্বে কখনো হয় নাই, সুতরাং সে এই অভিনব আন্দোলনের জন্য লেশমাত্র প্রস্তুত ছিল না। তাহার হাতের কাছে ছন্দ মিল কিছুরই জোগাড় ছিল না, তবু সে দমিল না দেখিয়া আশ্চর্য হইয়া গেলাম। কবিতা যেন বৃদ্ধ বয়সের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর মতো তাহাকে পাইয়া বসিল । নবীনমাধব ছন্দ মিল সম্বন্ধে সহায়তা ও সংশোধনের জন্ত আমার শরণাপন্ন হইল।