পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ २०१ বিধবার অভিভাবক পিসে কিছু টাকা চায়। আমি বলিলাম, “এখনই লও।” নবীন বলিল, “তাহ ছাড়া বিবাহের পর প্রথম মাস পাচ-ছয় বাবা নিশ্চয় আমার , মাসহার বন্ধ করিয়া দিবেন, তখনকার মতো উভয়ের খরচ চালাইবার জোগাড় করিয়া দিতে হইবে।” আমি কথাটি না কহিয়া চেক লিখিয়া দিলাম। বলিলাম, “এখন তাহার নামটি বলে। আমার সঙ্গে যখন কোনো প্রতিযোগিতা নাই তখন পরিচয় দিতে ভয় করিয়ে না। তোমার গ৷ ছু ইয়া শপথ করিতেছি, আমি তাহার নামে কবিতা লিখিব না, এবং যদি লিখি ৰ্তাহার ভাইকে না পাঠাইয়া তোমার কাছে পাঠাইয়া দিব ।” নবীন কহিল, “আরে, সেজন্য আমি ভয় করি না। বিধবাবিবাহের লজ্জায় তিনি অত্যন্ত কাতর, তাই তোমাদের কাছে র্তাহার সম্বন্ধে আলোচনা করিতে তিনি অনেক করিয়া নিষেধ করিয়া দিয়াছিলেন । কিন্তু এখন আর ঢাকিয়া রাখা মিথ্যা। তিনি তোমারই প্রতিবেশিনী, ১৯ নম্বরে থাকেন।” হৃৎপিণ্ডটা যদি লোহার বয়লার হইত তো এক চমকে ধকৃ করিয়া ফাটিয়া যাইত। জিজ্ঞাসা করিলাম, “বিধবাবিবাহে তাহার অমত নাই ?” নবীন হাসিয়া কহিল, “সম্প্রতি তো নাই।” আমি কহিলাম, "কেবল কবিতা পড়িয়াই তিনি মুগ্ধ ?” নবীন কহিল, “কেন, আমার সেই কবিতাগুলি তো মন্দ হয় নাই।” আমি মনে মনে কহিলাম, ‘ধিক। ধিক্‌ কাহাকে। র্তাহাকে, না আমাকে, না বিধাতাকে। কিন্তু ধিক্ । নষ্টনীড় প্রথম পরিচ্ছেদ ভূপতির কাজ করিবার কোনো দরকার ছিল না। র্তাহার টাকা যথেষ্ট ছিল, এবং দেশটাও গরম। কিন্তু গ্রহবশত তিনি কাজের লোক হইয়া জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। এইজন্ত তাহাকে একটা ইংরেজি খবরের কাগজ বাহির করিতে হইল। ইহার পরে সময়ের দীর্ঘতার জন্য র্তাহাকে আর বিলাপ করিতে হয় নাই।