পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२९8 রবীন্দ্র-রচনাবলী কেবল ঘুম পায়। বলিয়া সে অকালে খেলাভঙ্গে উভয়ের প্রতি অত্যন্ত বিরক্ত হইয়া চলিয়া গেল । সেই মন্দা আজ কমলাকাস্তের সমালোচনা শুনিবার জন্য উৎসুক। অমল কহিল, “তা বেশ তো মন্দা-বউঠান, তুমি শুনবে সে তো আমার সৌভাগ্য।” বলিয়া পাত উলটাইয়া আবার গোড়া হইতে পড়িবার উপক্রম করিল ; লেখার আরম্ভে সে অনেকটা পরিমাণ রস ছড়াইয়াছিল, সেটুকু বাদ দিয়া পড়িতে তাহার প্রবৃত্তি হইল না। চারু তাড়াতাড়ি বলিল, “ঠাকুরপো, তুমি যে বলেছিলে জাহ্নবী লাইব্রেরি থেকে পুরোনো মাসিক পত্র কতকগুলো এনে দেবে।” অমল । সে তো আজ নয় । চারু। আজই তো। বেশ। ভুলে গেছ বুঝি। অমল। ভুলব কেন । তুমি যে বলেছিলে— চারু। আচ্ছ বেশ, এনে না। তোমরা পড়ে। আমি যাই, পরেশকে লাইব্রেরিতে পাঠিয়ে দিই গে। বলিয়া চারু উঠিয়া পড়িল । অমল বিপদ আশঙ্কা করিল। মন্দা মনে মনে বুঝিল এবং মুহূর্তের মধ্যেই চারুর প্রতি তাহার মন বিষাক্ত হইয়া উঠিল। চারু চলিয়া গেলে অমল যখন উঠিবে কি না ভাবিয়া ইতস্তত করিতেছিল মন্দা ঈষৎ হাসিয়া কহিল, “যাও ভাই, মান ভাঙাও গে ; চারু রাগ করেছে। আমাকে লেখা শোনালে মুশকিলে পড়বে।” ইহার পরে অমলের পক্ষে ওঠা অত্যন্ত কঠিন। অমল চারুর প্রতি কিছু রুষ্ট হইয়া কহিল, "কেন, মুশকিল কিসের।” বলিয়া লেখা বিস্তৃত করিয়া ধরিয়া পড়িবার উপক্রম করিল। মন্দা দুই হাতে তাহার লেখা আচ্ছাদন করিয়া বলিল, “কাজ নেই ভাই, পোড়ো না।” বলিয়া, যেন অশ্র সম্বরণ করিয়া, অন্যত্র চলিয়া গেল । পঞ্চম পরিচ্ছেদ চারু নিমন্ত্রণে গিয়াছিল। মন্দা ঘরে বসিয়া চুলের দড়ি বিনাইতেছিল। *বউঠান” বলিয়া অমল ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল। মন্দা নিশ্চয় জানিত যে, চারুর নিমন্ত্রণে যাওয়ার সংবাদ অমলের অগোচর ছিল না ; হাসিয়া কহিল, "আহ অমলবাবু, কাকে খুজতে এসে কার দেখা পেলে। এমনি তোমার অদৃষ্ট।” অমল কহিল, “র্ব দিকের বিচালিও যেমন ডান দিকের বিচালিও ঠিক তেমনি, গর্দভের পক্ষে দুইই সমান আদরের।” বলিয়া সেইখানে বসিয়া গেল ।