পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ २९*> এই লেখাটা অমল কাড়িয়া লইয়া পড়িল। তাহার মনে হইল, গোড়ার দিকট। বেশ সরস হইয়াছে, কিন্তু কবিত্ব শেষ পর্যস্ত রক্ষিত হয় নাই। যাহা হউক, প্রথম রচনার পক্ষে লেখিকার উদ্যম প্রশংসনীয়। চারু কহিল, “ঠাকুরপো, এসে আমরা একটা মাসিক কাগজ বের করি। কী বল ।” অমল। অনেকগুলি রৌপ্যচক্র না হলে সে কাগজ চলবে কী করে। চারু। আমাদের এ কাগজে কোনো খরচ নেই। ছাপা হবে না তো– হাতের অক্ষরে লিখব। তাতে তোমার আমার ছাড়া আর কারো লেখা বেরবে না, কাউকে পড়তে দেওয়া হবে না । কেবল তু কপি করে বের হবে ; একটি তোমার জন্তে, একটি আমার জন্তে । কিছুদিন পূর্বে হইলে অমল এ প্রস্তাবে মাতিয়া উঠিত ; এখন গোপনতার উৎসাহ তাহার চলিয়া গেছে । এখন দশজনকে উদ্দেশ না করিয়া কোনো রচনায় সে সুখ পায় না। তবু সাবেক কালের ঠাট বজায় রাখিবার জন্য উৎসাহ প্রকাশ করিল। কহিল, “সে বেশ মজা হবে।” চারু কহিল, “কিন্তু প্রতিজ্ঞা করতে হবে, আমাদের কাগজ ছাড়া আর কোথাও তুমি লেখা বের করতে পারবে না।” অমল। তা হলে সম্পাদকরা যে মেরেই ফেলবে। চারু। আর আমার হাতে বুঝি মারের অস্ত্র নেই ? সেইরূপ কথা হইল। দুই সম্পাদক, দুই লেখক এবং দুই পাঠকে মিলিয়া কমিটি বসিল। অমল কহিল, "কাগজের নাম দেওয়া যাক চারুপীঠ ।” চারু কহিল, “না, এর নাম আমলা ৷” এই নৃতন বন্দোবস্তে চারু মাঝের কয়দিনের দুঃখবিরক্তি ভুলিয়া গেল। তাহদের মাসিক পত্রটিতে তো মন্দার প্রবেশ করিবার কোনো পথ নাই এবং বাহিরের লোকেরও প্রবেশের দ্বার রুদ্ধ । k সপ্তম পরিচ্ছেদ ভূপতি একদিন আসিয়া কহিল, ‘চারু, তুমি যে লেখিকা হয়ে উঠবে, পূর্বে এমন তো কোনো কথা ছিল না ।” চারু চমকিয়া লাল হইয়া উঠিয়া কহিল, “আমি লেখিকা ! কে বললে তোমাকে । কথখনে না।” ভূপতি। বামালমৃদ্ধ গ্রেফতার। প্রমাণ হাতে-হাতে। বলিয়া ভূপতি একখণ্ড