পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ २8७ ভূপতি অমলকে ডাকিয়া পাঠাইল। অমল আসিলে তাহাকে বলিল, “বর্ধমানের উকিল রঘুনাথবাবুর মেয়ের সঙ্গে তোমার বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। তার ইচ্ছে বিবাহ দিয়ে তোমাকে বিলেত পাঠিয়ে দেবেন। তোমার কী মত।” অমল কহিল, “তোমার যদি অনুমতি থাকে, আমার এতে কোনো অমত নেই।” অমলের কথা শুনিয়া উভয়ে আশ্চর্য হইয়া গেল। সে যে বলিবামাত্রই রাজি হইবে, এ কেহ মনে করে নাই । চারু তীব্রস্বরে ঠাট্টা করিয়া কহিল, "দাদার অনুমতি থাকলেই উনি মত দেবেন। কী আমার কথার বাধ্য ছোটো ভাই। দাদার পরে ভক্তি এতদিন কোথায় ছিল, ঠাকুরপো ।” - অমল উত্তর না দিয়া একটুখানি হাসিবার চেষ্টা করিল। অমলের নিরুত্তরে চারু যেন তাহাকে চেতাইয়া তুলিবার জন্য দ্বিগুণতর কাজের সঙ্গে বলিল, “তার চেয়ে বলো-না কেন, নিজের ইচ্ছে গেছে। এতদিন ভান করে থাকবার কী দরকার ছিল যে বিয়ে করতে চাও না ? পেটে খিদে মুখে লাজ ।” ভূপতি উপহাস করিয়া কহিল, “অমল তোমার খাতিরেই এতদিন খিদে চেপে রেখেছিল, পাছে ভাজের কথা শুনে তোমার হিংসা হয়।” চারু এই কথায় লাল হইয়া উঠিয়া কোলাহল করিয়া বলিতে লাগিল, “হিংসে ! তা বৈকি ! কথখনো আমার হিংসে হয় না। ওরকম করে বলা তোমার ভারি অন্যায় ।” ভূপতি। ওই দেখো। নিজের স্ত্রীকে ঠাট্টাও করতে পারব না। চারু। না, ওরকম ঠাট্ট আমার ভালো লাগে না । ভূপতি। আচ্ছা, গুরুতর অপরাধ করেছি। মাপ করে । যা হোক, বিয়ের প্রস্তাবটা তা হলে স্থির ? অমল কহিল, “হঁ৷ ” চারু। মেয়েটি ভালো কি মন্দ তাও বুঝি একবার দেখতে যাবারও তর সইল না। তোমার যে এমন দশা হয়ে এসেছে তা তো একটু আভাসেও প্রকাশ কর নি। ভূপতি । অমল, মেয়ে দেখতে চাও তো তার বন্দোবস্ত করি । খবর নিয়েছি মেয়েটি সুন্দরী। অমল । না, দেখবার দরকার দেখি নে । চারু। ওর কথা শোন কেন। সে কি হয়। কনে না দেখে বিয়ে হবে ? ও না দেখতে চায় আমরা তো দেখে নেব ।