পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミ8br রবীন্দ্র-রচনাবলী ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ ভূপতি বর্ধমানে গিয়া অমলের বিবাহ-অন্তে তাহাকে বিলাতে রওনা করিয়া হয়ে ফিরিয়া আসিল । নানা দিক হইতে ঘা খাইয়া বিশ্বাসপরায়ণ ভূপতির মনে বহি:সংসারের প্রতি একটা বৈরাগ্যের ভাব আসিয়াছিল। সভাসমিতি মেলামেশা কিছুই তাহার ভালো লাগিত না । মনে হইল, “এই-সব লইয়া আমি এতদিন কেবল নিজেকেই ফাকি দিলাম – জীবনের সুখের দিন বৃথা বহিয়া গেল এবং সারভাগ আবর্জনাকুণ্ডে ফেলিলাম।” ভূপতি মনে মনে কহিল, যাক, কাগজটা গেল, ভালোই হইল। মুক্তিলাভ করিলাম।” সন্ধ্যার সময় আঁধারের সূত্রপাত দেখিলেই পাখি যেমন করিয়া নীড়ে ফিরিয়া আসে, ভূপতি সেইরূপ তাহার দীর্ঘদিনের সঞ্চরণক্ষেত্র পরিত্যাগ করিয়া অস্তঃপুরে চারুর কাছে চলিয়া আসিল। মনে মনে স্থির করিল, ‘বাস, এখন আরকোথাও নয় ; এইখানেই আমার স্থিতি। যে কাগজের জাহাজটা লইয়া সমস্তদিন খেলা করিতাম সেটা ডুবিল, এখন ঘরে চলি । বোধ করি ভূপতির একটা সাধারণ সংস্কার ছিল, স্ত্রীর উপর অধিকার কাহাকেও অর্জন করিতে হয় না, স্ত্রী ধ্রুবতারার মতো নিজের আলো নিজেই জালাইয়া রাখে— হাওয়ায় নেবে না, তেলের অপেক্ষ রাখে না। বাহিরে যখন ভাঙচুর আরম্ভ হইল তখন অস্তঃপুরে কোনো খিলানে ফাটল ধরিয়াছে কি না তাহা একবার পরখ করিয়া দেখার কথাও ভূপতির মনে স্থান পায় নাই । ভূপতি সন্ধ্যার সময় বর্ধমান হইতে বাড়ি ফিরিয়া আসিল । তাড়াতাড়ি মুখহাত ধুইয়া সকাল সকাল খাইল । অমলের বিবাহ ও বিলাতযাত্রার আদ্যোপাস্ত বিবরণ শুনিবার জন্য স্বভাবতই চারু একান্ত উংস্থক হইয়া আছে স্থির করিয়া ভূপতি আজ কিছুমাত্র বিলম্ব করিল না। ভূপতি শোবার ঘরে বিছানায় গিয়া শুইয়া গুড়গুড়ির সুদীর্ঘ নল টানিতে লাগিল। চারু এখনো অনুপস্থিত, বোধ করি গৃহকার্য করিতেছে। তামাক পুড়িয়া গ্রান্ত ভূপতির ঘুম আসিতে লাগিল। ক্ষণে ক্ষণে ঘুমের ঘোর ভাঙিয়া চমকিয়া জাগিয়া উঠিয়া সে ভাবিতে লাগিল, এখনো চারু আসিতেছে না কেন । অবশেষে ভূপতি থাকিতে ন পারিয়া চারুকে ডাকিয়া পাঠাইল। ভূপতি জিজ্ঞাসা করিল, “চারু, আজ যে এত দেরি করলে ?” চারু তাহার জবাবদিহি না করিয়া কহিল, “হা, আজ দেরি হয়ে গেল।” চারুর আগ্রহপূর্ণ প্রশ্নের জন্য ভূপতি অপেক্ষা করিয়া রহিল ; চারু কোনো প্রশ্ন