পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२¢ २ রবীন্দ্র-রচনাবলী পড়িয়াছিল। এমন করিয়া কতদিন কিরূপে চলিবে । ভূপতি আর কিছু অবলম্বন করে না কেন। আর-একটা খবরের কাগজ চালায় না কেন। ভূপতির চিত্তরঞ্জন করিবার অভ্যাস এ পর্যন্ত চারুকে কখনো করিতে হয় নাই, ভূপতি তাহার কাছে কোনো সেবা দাবি করে নাই, কোনো সুখ প্রার্থনা করে নাই, চারুকে সে সর্বতোভাবে নিজের প্রয়োজনীয় করিয়া তোলে নাই ; আজ হঠাৎ তাহার জীবনের সমস্ত প্রয়োজন চারুর নিকট চাহিয়া বসাতে সে কোথাও কিছু যেন খুজিয়া পাইতেছে না । ভূপতির কী চাই, কী হইলে সে তৃপ্ত হয়, তাহা চারু ঠিকমত জানে না এবং জানিলেও তাহ! চারুর পক্ষে সহজে আয়ত্তগম্য নহে । ভূপতি যদি অল্পে অল্পে অগ্রসর হইত তবে চারুর পক্ষে হয়তো এত কঠিন হইত না। কিন্তু হঠাৎ এক রাত্রে দেউলিয়া হইয়া রিক্ত ভিক্ষাপাত্র পাতিয়া বসাতে সে যেন বিব্রত হইয়াছে। চারু কহিল, “আচ্ছা, মন্দাকে আনিয়ে নাও, সে থাকলে তোমার দেখাশুনোর অনেক সুবিধে হতে পারবে ।” 配 ভূপতি হাসিয়া কহিল, “আমার দেখাশুনো ! কিছু দরকার নেই।” ভূপতি ক্ষুন্ন হইয়া ভাবিল, “আমি বড়ে নীরস লোক, চারুকে কিছুতেই আমি সুখী করিতে পারিতেছি না।’ এই ভাবিয়া সে সাহিত্য লইয়া পড়িল । বন্ধুরা কখনো বাড়ি আসিলে বিস্মিত হইয়া দেখিত, ভূপতি টেনিসন, বাইরন, বঙ্কিমের গল্প এই সমস্ত লইয়া আছে। ভূপতির এই অকাল-কাব্যানুরাগ দেখিয়া বন্ধুবান্ধবেরা অত্যন্ত ঠাট্টাবিদ্রুপ করিতে লাগিল। ভূপতি হাসিয়া কহিল, “ভাই, বঁাশের ফুলও ধরে, কিন্তু কখন ধরে তার ঠিক নেই।” একদিন সন্ধ্যাবেলায় শোবার ঘরে বড়ো বাতি জালাইয়া ভূপতি প্রথমে লজ্জায় একটু ইতস্তত করিল ; পরে কহিল, “একটা কিছু পড়ে শোনাব ?” চারু কহিল, “শোনাও-না।” ভূপতি। কী শোনাব। চারু। তোমার যা ইচ্ছে । ভূপতি চারুর অধিক আগ্রহ না দেখিয়া একটু দমিল। তবু সাহস করিয়া কহিল, “টেনিসন থেকে একটা কিছু তর্জমা করে তোমাকে শোনাই ।” চারু কহিল, “শোনাও।” সমস্তই মাটি হইল। সংকোচ ও নিরুৎসাহে ভূপতির পড়া বাধিয়া যাইতে