পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী । هوا ج এমনি হইল, হঠাৎ চারু চমকিয়া উঠিত, কথা কহিতে কহিতে তাহাকে কঁাদিবার জন্য উঠিয়া যাইতে হইত, অমলের নাম শুনিবামাত্র তাহার মুখ বিবর্ণ হইয়৷ যাইত । অবশেষে ভূপতিও সমস্ত দেখিল, এবং যাহা মুহূর্তের জন্ত ভাবে নাই তাহাও ভাবিল– সংসার একেবারে তাহার কাছে বৃদ্ধ শুষ্ক জীর্ণ হইয়া গেল । মাঝে যে-কয়দিন আনন্দের উন্মেষে ভূপতি অন্ধ হইয়াছিল সেই কয়দিনের স্মৃতি তাহাকে লজ্জা দিতে লাগিল। ষে অনভিজ্ঞ বানর জহর চেনে না তাহাকে ঝুটা পাথর দিয়া কি এমনি করিয়াই ঠকাইতে হয় । চারুর যে-সকল কথায় অাদরে ব্যবহারে ভূপতি ভুলিয়াছিল সেগুলা মনে আসিয়া তাহাকে ‘মূঢ়, মূঢ়, মূঢ় বলিয়া বেত মারিতে লাগিল । অবশেষে তাহার বহু কষ্টের বহু যত্বের রচনাগুলির কথা যখন মনে উদয় হইল তখন ভূপতি ধরণীকে দ্বিধা হইতে বলিল । অঙ্কুশতাড়িতের মতো চারুর কাছে দ্রুতপদে গিয়া ভূপতি কহিল, “আমার সেই লেখাগুলো কোথায় ।” চারু কহিল, “আমার কাছেই আছে।” ভূপতি কহিল, “সেগুলো দাও।” চারু তখন ভূপতির জন্য ডিমের কচুরি ভাজিতেছিল, কহিল, “তোমার কি এখনই চাই ।” ভূপতি কহিল, “হা, এখনই চাই।” চারু কড়া নামাইয়া রাখিয়া আলমারি হইতে খাতা ও কাগজগুলি বাহির করিয়া আনিল । ভূপতি অধীরভাবে তাহার হাত হইতে সমস্ত টানিয়া লইয়া খাতাপত্র একেবারে উনানের মধ্যে ফেলিয়া দিল । চারু ব্যস্ত হইয়া সেগুলা বাহির করিবার চেষ্টা করিয়া কহিল, “এ কী করলে।” ভূপতি তাহার হাত চাপিয়া ধরিয়া গর্জন করিয়া বলিল, “থাক।” চারু বিস্মিত হইয়া দাড়াইয়া রহিল। সমস্ত লেখা নিঃশেষে পুড়িয়া ভস্ম হইয়। গেল । চারু বুঝিল। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিল। কচুরিভাজা অসমাপ্ত রাখিয়া ধীরে ধীরে অন্যত্র চলিয়া গেল । @ o so চারুর সম্মুখে খাতা নষ্ট করিবার সংকল্প ভূপতির ছিল না। কিন্তু ঠিক সামনেই আগুনটা জলিতেছিল, দেখিয়া কেমন যেন তাহার খুন চাপিয়া উঠিল। ভূপতি