পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२१२ রবীন্দ্র-রচনাবলী নিঝরিণী। আহা, আর ঠাট্টা করিতে হইবে না । আমি । না, ঠাট্টা করিতেছি না। সত্যিই ছাপিতে দিব । নিঝরিণী। সে কোথায় গেছে অনুমি জানি না । আমি কিছু জেদের সঙ্গেই বলিলাম, “ন। নিঝর, সে কিছুতেই হইবে না। বলে, সেটা কোথায় অাছে।” নিঝরিণী কহিল, “সত্যই সেটা নাই ।” আমি । কেন, কী হইল। নিঝরিণী। সে আমি পুড়াইয়া ফেলিয়াছি। আমি চমকিয়া উঠিয়া কহিলাম, “অ্যা, সে কী । কবে পুড়াইলে ।” নিঝরিণী। আজই পুড়াইয়াছি। আমি কি জানি না যে, আমার লেখা ছাই লেখা। স্ত্রীলোকের রচনা বলিয়া লোকে মিথ্যা করিয়া প্রশংসা করে। ইহার পর হইতে এ পর্যন্ত নিঝরকে সাধ্যসাধনা করিয়াও এক ছত্র লিখাইতে পারি নাই । ইতি শ্ৰীহরিশচন্দ্র হালদার উপরে যে গল্পটি লেখা হইয়াছে উহার পনেরো-আনাই গল্প। আমার স্বামী যে বাংলা কত অল্প জানেন, তাহা তাহার রচীত উপন্যাশটি পড়িলেই কাহারো বুঝিতে বাকি থাকিবে না। ছিছি নিজের স্ত্রিকে লইয়া এমনি করিয়া কি গল্প বানাইতে হয় ? ইতি শ্ৰীনিঝরিনি দেবী স্ত্রীলোকের চাতুরী সম্বন্ধে দেশী-বিদেশী শাস্ত্ৰে-অশাস্ত্রে অনেক কথা আছে– তাহাই স্মরণ করিয়া পাঠকেরা ঠকিবেন না। আমার রচনাটুকুর ভাষা ও বানান কে সংশোধন করিয়া দিয়াছেন, সে কথা আমি বলিব না— না বলিলেও বিজ্ঞ পাঠক অনুমান করিতে পারিবেন। আমার স্ত্রী যে কয়-লাইন লিখিয়াছেন তাহার বানানভুলগুলি দেখিলেই পাঠক বুঝিবেন, সেগুলি ইচ্ছাকৃত— তাহার স্বামী যে বাংলায় পরমপণ্ডিত এবং গল্পটা ষে আষাঢ়ে, ইহাই প্রমাণ করিবার এই অতি সহজ উপায় তিনি বাহির করিয়াছেন– এইজন্তই কালিদাস লিখিয়াছেন, স্ত্রণামশিক্ষিতপটুত্বম। তিনি স্ত্রীচরিত্র বুঝিতেন। আমিও সম্প্রতি চোখ-ফোটার পর হইতে বুঝিতে শুরু করিয়াছি। কালে হয়তো কালিদাস হইয়া উঠিতেও পারিব। কালিদাসের সঙ্গে আরো একটু সাদৃপ্ত দেখিতেছি। শুনিয়াছি, কবিবর নববিবাহের পর তাহার বিদুষী