গল্পগুচ্ছ २brs
পরিত্যক্ত ঘরে তাহার থাটের খুর। ধরিয়া মাটিতে পড়িয়া আছে— শূন্ত শয্যাটাকে যেন পায়ে ধরিয়া সাধিতেছে। তাহার বুকের ভিতরে যে একটি স্বধার পাত্র লুকানে ছিল সেইটে যেন শূন্ততার চরণে বৃথা আশ্বাসে উপুড় করিয়া ঢালিয়া দিতেছে— ভূমিতলে পুীভূত সেই স্খলিতকেশ লুষ্ঠিতবসন নারী যেন নীরব একাগ্রতার ভাষায় বলিতেছে, “লও, লও, আমাকে লও। ওগো, আমাকে লও।”
পটল বিস্মিত হইয়া কহিল, “ও কী হইতেছে, কুড়ানি।”
কুড়ানি উঠিল না ; সে যেমন পড়িয়া ছিল তেমনি পড়িয়া রহিল। পটল কাছে আসিয়া তাহাকে স্পর্শ করিতেই সে উচ্ছসিত হইয়া ফুলিয়া ফুলিয়া কাদিতে লাগিল ।
পটল তখন চকিত হইয়া বলিয়া উঠিল, “ও পোড়ারমুখি, সর্বনাশ করিয়াছিস । মরিয়াছিস ।”
হরকুমারকে পটল কুড়ানির অবস্থা জানাইয়া কহিল, “এ কী বিপদ ঘটিল। তুমি কী করিতেছিলে, তুমি আমাকে কেন বারণ করিলে না।”
হরকুমার কহিল, “তোমাকে বারণ করা যে আমার কোনোকালে অভ্যাস নাই। বারণ করিলেই কি ফল পাওয়া যাইত ।”
পটল। তুমি কেমন স্বামী ? আমি যদি ভূল করি, তুমি আমাকে জোর করিয়া থামাইতে পার না ? আমাকে তুমি এ খেলা থেলিতে দিলে কেন।
এই বলিয়া সে ছুটিয়া গিয়া ভূপতিত বালিকার গলা জড়াইয়া ধরিয়া কহিল, “লক্ষ্মী বোন আমার, তোর কী বলিবার আছে, আমাকে খুলিয়া বল।”
হায়, কুড়ানির এমন কী ভাষা আছে যে, আপনার হৃদয়ের অব্যক্ত রহস্য সে কথা দিয়া বলিতে পারে। সে একটি অনির্বচনীয় বেদনার উপর তাহার সমস্ত বুক দিয়া চাপিয়া পড়িয়া আছে – সে বেদনাটা কী, জগতে এমন আর কণহারো হয় কি না, তাহাকে লোকে কী বলিয়া থাকে, কুড়ানি তাহার কিছুই জানে না । সে কেবল কান্না দিয়া বলিতে পারে ; মনের কথা জানাইবার তাহার আর কোনো উপায় নাই ।
পটল কহিল, “কুড়ানি, তোর দিদি বড়ো দুই ; কিন্তু তার কথা যে তুই এমন করিয়া বিশ্বাস করিবি, তা সে কখনো মনেও করে নি। তার কথা কেহ কখনো বিশ্বাস করে না ; তুই এমন ভুল কেন করিলি। কুড়ানি, একবার মুখ তুলিয়া তোর দিদির মুখের দিকে চা ; তাকে মাপ কর।”
কিন্তু, কুড়ানির মন তখন বিমুখ হইয়া গিয়াছিল, সে কোনোমতেই পটলের মুখের দিকে চাহিতে পারিল না ; সে আরো জোর করিয়া হাতের মধ্যে মাথা গুজিয়া রহিল। সে ভালো করিয়া সমস্ত কথা না বুঝিয়াও একপ্রকার মূঢ়ভাবে পটলের প্রতি রাগ
পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০১
পরিভ্রমণে ঝাঁপ দিন
অনুসন্ধানে ঝাঁপ দিন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
