পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WÒ) 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী কাজকর্মের চেষ্টা দেখুক । পুরুষমানুষ পরের পয়সায় বাবুগিরি করে, সে কি ভালো দেখতে হয় । শশধর । ওর মা যে টাকা পায় তাতে সতীশের চলবে কী করে। স্বকুমারী। কেন, ওদের বাড়ি ভাড়া লাগে না, মাসে পচাত্তর টাকা কম কী। শশধর । সতীশের যেরূপ চাল দাড়িয়েছে, পচাত্তর টাকা তো সে চুরুটের ডগাতেই ফুকে দেবে। মার গহনাগাটি ছিল, সে তো অনেকদিন হল গেছে ; এখন হবিন্যান্ন বাধা দিয়ে তো দেনা শোধ হবে না । সুকুমারী। যার সামর্থ্য কম তার অত লম্বা চালেই বা দরকার কী। শশধর । মন্মথ তো সেই কথাই বলত। আমরাই তো সতীশকে অন্যরূপ বুঝিয়েছিলেম। এখন ওকে দোষ দিই কী করে। স্বকুমারী। না, দোষ কি ওর হতে পারে। সব দোষ আমারই! তুমি তো আর কারো কোনো দোষ দেখতে পাও না— কেবল আমার বেলাতেই তোমার দর্শনশক্তি বেড়ে যায় । لم - শশধর। ওগো, রাগ কর কেন— আমিও তো দোষী। স্বকুমারী। তা হতে পারে। তোমার কথা তুমি জান। কিন্তু, আমি কখনো ওকে এমন কথা বলি নি যে, তুমি তোমার মেসোর ঘরে পায়ের উপর পা দিয়ে গোফে তা দাও, আর লম্বা কেদারায় বসে বসে আমার বাছার উপর বিষদৃষ্টি দিতে থাকো । শশধর। না, ঠিক ওই কথাগুলো তুমি তাকে মাথার দিব্য দিয়ে শপথ করিয়ে নাও নি— অতএব তোমাকে দোষ দিতে পারি নে। এখন কী করতে হবে বলে । স্বকুমারী। সে তুমি যা ভালো বোধ কর তাই করে । , কিন্তু আমি বলছি, সতীশ যতক্ষণ এ বাড়িতে থাকবে, আমি খোকাকে কোনোমতে বাইরে যেতে দিতে পারব না। ডাক্তার থোকাকে হাওয়া খাওয়াতে বিশেষ করে বলে দিয়েছে— কিন্তু হাওয়া খেতে গিয়ে ও কখন একলা সতীশের নজরে পড়বে, সে কথা মনে করলে আমার মন স্থির থাকে না। ও তো আমারই আপন বোনের ছেলে, কিন্তু আমি ওকে এক মুহূর্তের জন্যও বিশ্বাস করি নে— এ আমি তোমাকে স্পষ্টই বললেম। সতীশের প্রবেশ সতীশ । কাকে বিশ্বাস কর না মাসিমা । আমাকে ? অামি তোমার খোকাকে স্থযোগ পেলে গল টিপে মারব, এই তোমার ভয় ? যদি মারি তবে, তুমি তোমার বোনের ছেলের যে অনিষ্ট করেছ, তার চেয়ে ওর কি বেশি অনিষ্ট করা হবে ।