পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ లు a মজুমদারের তখন নেশা ও ঘুমের ঘোর সম্পূর্ণ ছাড়িয়া যাওয়াতে গাড়োয়ানের গল্পে কৰ্ণপাত না করিয়া ভাড়া চুকাইয়া দিয়া চলিয়া গেল। কিন্তু রাত্রে তাহার ভালো করিয়া ঘুম হইল না— কেবলই ভাবিতে লাগিল, সেই চাহনিটা কার । S অধর মজুমদারের বাপ সামান্য শিপ-সরকারি হইতে আরম্ভ করিয়া একটা বড়ে হোসের মুচ্ছদিগিরি পর্যন্ত উঠিয়াছিলেন। অধরবাবু বাপের উপাজিত নগদ টাকা স্বদে থাটাইতেছেন, তাহাকে আর নিজে খাটিতে হয় না । বাপ মাথায় সাদা ফেট। বাধিয়া পালকিতে করিয়া আপিসে যাইতেন, এ দিকে র্তাহার ক্রিয়াকর্ম দানধ্যান যথেষ্ট ছিল । বিপদে-আপদে অভাবে-অনটনে সকল শ্রেণীর লোকেই যে র্তাহাকে আসিয়া ধরিয়৷ পড়িত, ইহাই তিনি গর্বের বিষয় মনে করিতেন । অধরবাবু বড়ো বাড়ি ও গাড়ি-জুড়ি করিয়াছেন, কিন্তু লোকের সঙ্গে আর তাহার সম্পর্ক নাই ; কেবল টাকা-ধারের দালাল আসিয়া তাহার বাধানে। হু কায় তামাক টানিয়া যায় এবং অ্যাটনি আপিসের বাবুদের সঙ্গে স্ট্যাম্প-দেওয়া দলিলের শর্ত সম্বন্ধে আলোচনা হইয়া থাকে। র্তাহার সংসারে খরচপত্র সম্বন্ধে হিসাবের এমনি কষাকষি যে পাড়ার ফুটবল ক্লাবের নাছোড়বান্দা ছেলেরাও বহু চেষ্টায় তাহার তহবিলে দস্তস্ফুট করিতে পারে নাই । এমন সময় তাহার ঘরকন্নার মধ্যে একটি অতিথির আগমন হইল। ছেলে হল না, হল না, করিতে করিতে অনেকদিন পরে তাহার একটি ছেলে জন্মিল । ছেলেটির চেহারা তাহার মার ধরনের। বড়ো বড়ো চোখ, টিকলো নাক, রঙ রজনীগন্ধার পাপড়ির মতো— যে দেখিল সেই বলিল, “আহ। ছেলে তো নয়, যেন কাতিক।” অধরবাবুর অমুগত অনুচর রতিকান্ত বলিল, “বড়ো ঘরের ছেলের যেমনটি হওয়া উচিত তেমনই হইয়াছে।” ছেলেটির নাম হুইল বেণুগোপাল । ইতিপূর্বে অধরবাবুর স্ত্রী ননীবালা সংসারখরচ লইয়া স্বামীর বিরুদ্ধে নিজের মত তেমন জোর করিয়া কোনোদিন খাটান নাই। দুটো একটা শখের ব্যাপার অথবা লৌকিকতার অত্যাবস্তক আয়োজন লইয়া মাঝে মাঝে বচস হইয়াছে বটে, কিন্তু শেষকালে স্বামীর কৃপণতার প্রতি অবজ্ঞা করিয়া নিঃশব্দে হার মানিয়াছেন। এবারে ননীবালাকে অধরলাল আঁটিয়া উঠিতে পারিলেন না, বেণুগোপাল সম্বন্ধে