পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

එම්ෂ রবীন্দ্র-রচনাবলী বেতনে কাজ আরম্ভ করে, কাজ শিথিলে উন্নতি হইবে।” তার পরে সাহেব তাহার বেশভূষার প্রতি দৃষ্টি করিয়া কহিলেন, “পনেরো টাকা আগাম দিতেছি— আপিসের উপযুক্ত কাপড় তৈরি করাইয়া লইবে।” কাপড় তৈরি হইল, হরলাল আপিসেও বাহির হইতে আরম্ভ করিল। বড়োসাহেব তাহাকে ভূতের মতো খাটাইতে লাগিলেন। অন্য কেরানিরা বাড়ি গেলেও হরলালের ছুটি ছিল না। এক-একদিন সাহেবের বাড়ি গিয়াও র্তাহাকে কাজ বুঝাইয়া দিয়া আসিতে হইত। এমনি করিয়া কাজ শিথিয়া লইতে হরলালের বিলম্ব হইল না। তাহার সহযোগী কেরানির তাহকে ঠকাইবার অনেক চেষ্টা করিল, তাহার বিরুদ্ধে উপরওয়ালাদের কাছে লাগালাগিও করিল, কিন্তু এই নিঃশব্দ নিরীহ সামান্য হরলালের কোনো অপকার করিতে পারিল না । যখন তাহার চল্লিশ টাকা মাহিন হইল, তখন হরলাল দেশ হইতে মাকে আনিয়া একটি ছোটোখাটো গলির মধ্যে ছোটোখাটো বাড়িতে বাসা করিল। এতদিন পরে তাহার মার দুঃখ ঘুচিল। মা বলিলেন, “বাবা, এইবার বউ ঘরে আনিব।” হরলাল মাতার পায়ের ধুলা লইয়া বলিল, “মা, ওইটে মাপ করিতে হইবে।” মাতার আর-একটি অনুরোধ ছিল। তিনি বলিতেন, “তুই যে দিনরাত তোর ছাত্র বেণুগোপালের গল্প করিস, তাহাকে একবার নিমন্ত্রণ করিয়া খাওয়া । তাহাকে আমার দেখিতে ইচ্ছা করে।” হরলাল কহিল, “ম, এ বাসায় তাহাকে কোথায় বসাইব । রোসে, একটা বড়ো বাসা করি, তাহার পরে তাহাকে নিমন্ত্রণ করিব।” 이 হরলালের বেতনবৃদ্ধির সঙ্গে ছোটে৷ গলি হইতে বড়ো গলি ও ছোটো বাড়ি হইতে বড়ো বাড়িতে তাহার বাস-পরিবর্তন হইল। তবু সে কী জানি কী মনে করিয়া, অধরলালের বাড়ি যাইতে বা বেণুকে নিজের বাসায় ডাকিয়া আনিতে কোনোমতেই মন স্থির করিতে পারিল না । হয়তে কোনোদিনই তাহার সংকোচ ঘুচিত না। এমন সময়ে হঠাৎ খবর পাওয়া গেল বেণুর মা মারা গিয়াছেন। শুনিয়া মুহূর্ত বিলম্ব না করিয়া সে অধরলালের বাড়ি গিয়া উপস্থিত হইল । এই দুই অসমবয়সী বন্ধুতে অনেকদিন পরে আবার একবার মিলন হইল। বেণুর