পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ \ףסס অশোঁচের সময় পার হইয়া গেল— তবু এ বাড়িতে হরলালের যাতায়াত চলিতে লাগিল। কিন্তু ঠিক তেমনটি আর কিছুই নাই। বেণু এখন বড়ো হইয়া উঠিয়৷ অঙ্গুষ্ঠ ও তর্জনী -যোগে তাহার নূতন গোঁফের রেখার সাধ্যসাধনা করিতেছে। চালচলনে বাবুয়ান ফুটিয়া উঠিয়াছে। এখন তাহার উপযুক্ত বন্ধুবান্ধবেরও অভাব নাই। ফোনোগ্রাফে থিয়েটারের নটীদের ইতর গান বাজাইয়া সে বন্ধুমহলকে আমোদে রাখে। পড়িবার ঘরে সেই সাবেক ভাঙা চৌকি ও দাগি টেবিল কোথায় গেল। আয়নাতে, ছবিতে, আসবাবে ঘর যেন ছাতি ফুলাইয়া রহিয়াছে। বেণু এখন কলেজে যায় কিন্তু দ্বিতীয় বাৰ্ষিকের সীমানা পার হইবার জন্ত তাহার কোনো তাগিদ দেখা যায় না। বাপ স্থির করিয়া আছেন, দুই-একটা পাস করাইয়া লইয়া বিবাহের হাটে ছেলের বাজারদর বাড়াইয়া তুলিবেন । কিন্তু ছেলের মা জানিতেন ও স্পষ্ট করিয়া বলিতেন, “আমার বেণুকে সামান্ত লোকের ছেলের মতো গৌরব প্রমাণ করিবার জন্য পাসের হিসাব দিতে হইবে না— লোহার সিন্দুকে কোম্পানির কাগজ অক্ষয় হইয়া থাকৃ।” ছেলেও মাতার এ কথাটা বেশ করিয়া মনে মনে বুঝিয়া जश्ब्रांछ्लि । যাহা হউক, বেণুর পক্ষে সে যে আজ নিতান্তই অনাবশ্বক তাহ হরলাল স্পষ্টই বুঝিতে পারিল এবং কেবলই থাকিয়া থাকিয়া সেই দিনের কথা মনে পড়িল, যেদিন বেণু হঠাৎ সকালবেলায় তাহার সেই মেসের বাসায় গিয়া তাহার গলা জড়াইয়া ধরিয়া বলিয়াছিল ‘মাস্টারমশায় আমাদের বাড়ি চলো’। সে বেণু নাই, সে বাড়ি নাই, এখন মাস্টারমশায়কে কেই-বা ডাকিবে । হরলাল মনে করিয়াছিল, এইবার বেণুকে তাহাদের বাসায় মাঝে মাঝে নিমন্ত্রণ করিবে। কিন্তু তাহাকে আহবান করিবার জোর পাইল না। একবার ভাবিল, উহাকে আসিতে বলিব ; তাহার পরে ভাবিল, বলিয়া লাভ কী— বেণু হয়তে নিমন্ত্রণ রক্ষা করিবে, কিন্তু, থাকৃ। হর সালের মা ছাড়িলেন না । তিনি বারবার বলিতে লাগিলেন, তিনি নিজের হাতে রাধিয়া তাহাকে খাওয়াইবেন— আহা, বাছার মা মারা গেছে। অবশেষে হরলাল একদিন তাহাকে নিমন্ত্ৰণ করিতে গেল। কহিল, “অধরবাবুর কাছ হইতে অনুমতি লইয়া আসি।” বেণু কহিল, “অনুমতি লইতে হইবে না, আপনি কি মনে করেন আমি এখনো সেই খোকাবাবু আছি।” হরলালের বাসায় বেণু খাইতে আসিল। মা এই কাতিকের মতো ছেলেটিকে র্তাহার দুই স্নিগ্ধচক্ষুর আশীর্বাদে অভিষিক্ত করিয়া যত্ন করিয়া খাওয়াইলেন। র্তাহার